পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
১১০

আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলেম, “কে? কে তুমি? শীগ্‌গির কথা কও, শীগ্‌গির বলো কে তুমি?”

 ঘন ঘন দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ বাতাসের শব্দে ঢাকা পড়েনি, তেমনি হাঁফ ধরার মধ্য দিয়ে উত্তর এলো, “আমি দিব্যেন্দু, কুঁজোর জলে মিশিয়ে রেখে আমায় কে কি খাইয়েছে।—“উঃ জ্বলে যাচ্ছি,— জ্বলে যাচ্ছি,—আগুনের চাইতেও বেশী জ্বালা—”

 আমার কণ্ঠ চিরে একটা অর্দ্ধস্ফুট ধ্বনি ব্যক্ত হতে না হতেই নিজেকে প্রাণান্ত বলে কঠিন করে নিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে গিয়ে ওকে টেনে এনে শুইয়ে দিলেম। দোর বন্ধ করে আলো জ্বাললেম। বিনা প্রশ্নে কোনদিকে চেয়ে না দেখেই আমার ডাক্তারী ব্যাগ খুলে প্রতিযেধক ওষুধটি বার করে কুঁজোর জল ঢেলে নিয়ে তাতে ফোঁটা ফেলতে ফেলতে এতক্ষণে দিব্যেন্দুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেম, “জল খেয়েছ কতক্ষণ?”

 “আন্দাজ দশ মিনিট হবে। উঃ! বুকের মধ্যের আগুন যেন ক্রমশঃ,—একি!—এ যে একটা বরফের চাঁই হার্টের উপর—”

 আর কিছু না শুনেই ছুটে এসে ইজিচেয়ারে এলিয়ে পড়া দিব্যেন্দুর মুখে জলশুদ্ধ ওষুধটা ঢেলে দিয়ে তার ডান কব্জীর নাড়ীটা চেপে ধরলুম।—কি জানি, সময় পেলেম কি?

 ঘড়ি টিক্ টিক্ টিক্ টিক্ অনর্গল বকেই চলেছে,— আমার সমস্ত মনপ্রাণ উদগ্র আগ্রহে ও আতঙ্কে স্তম্ভিত হয়ে রয়েছে, নিজের শরীরেও যেন বিষক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে মনে হচ্ছিল। অবসন্ন করাঙ্গুলি নাড়ীর গতি পর্য্যবেক্ষণ শক্তি হয়ত হারিয়েই ফেলেছিল, হঠাৎ মনে হলো নাড়ী নেই। হাতখানা হিমশিলার মত অসহ্য ঠাণ্ডা। আর এক ডোজ ওষুধ প্রায় বন্ধ চোয়ালের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্টে তাকে খাইয়ে দিলেম।