পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

 সুনীতি অতি মৃদু একটা নিশ্বাস ভিতরে ভিতরে চাপিয়া ফেলিয়া সংযত-কণ্ঠে উত্তর করিল, “শুনেছি।”

 চন্দ্রকুমার নিজের খেয়ালেই যথাপূর্ব্ব বলিয়া চলিলেন, “হ্যাঁ শুনতেই হবে,—হবেই শুনতে, না শুনলে আমি ছাড়বো কেন? কেন, কেন, কেন ছাড়বো শুনি? আমার বাড়ীতে আমি কর্ত্তা নই?” চিরটা কাল ধরে শুনে আসছি, কর্ত্তার ইচ্ছায় কর্ম্ম! আজকের দিনে কিসের জন্যে তার ব্যতিক্রম হবে শুনি? হঠাৎ কি পৃথিবীটা সূয্যির আকর্ষণ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে? কিছুতেই না, কিছুতেই না, আমার যা খুসী হবে আমি করবো,—ঝি-চাকর, বামুনদিদি, বামুনঠাকুর যাকে ইচ্ছে হবে তাড়িয়ে দোব, দোবই দোব, কি করতে পারবে তুমি সুনীতি? পারবে কিছু করতে?”

 সুনীতি কি বলিবে? সে স্তব্ধ স্থির দাঁড়াইয়া রহিল, অথচ সে জানে তাকে এখনই রান্নাঘরের দিকে যাইতে হইবে, না গেলে রাত্রের আহার্য্য প্রস্তুত হইবে না। বাড়ীতে দ্বিতীয় প্রাণীটী পর্য্যন্ত নাই।

 চন্দ্রকুমার কিন্তু মেয়ের নীরব ঔদাস্য পছন্দ করিলেন না, আরও খানিকটা উত্তেজিত হইয়া কথার উপর জোর দিয়া দিয়া পুনশ্চ তাহাকে প্রশ্ন করিলেন, “কি গো! চুপ করে রৈলে কেন? মনে করচো—পারবে আমায় বাধা দিতে, না? কিন্তু এই আমি একটি কথায় বলে দিলুম তোমাকে, সে তুমি, তুমি তো তুমি, তোমার বাবা এলেও পারবে না। সে যা’ করবে সে শুধু আমি, আমিই করবো। বুঝতে পেরেছ? হ্যাঁ কি না শীগ্‌গির বলো, শীগ্‌গির—”

 এবার আর কথা না কহিলেই নয় দেখিয়া মৃদু নিক্ষিপ্তশ্বাসে অর্দ্ধস্ফুটস্বরে সুনীতি উত্তর করিল, “বুঝেছি বাবা, আমি এখন রান্না ঘরে যাচ্ছি···”