পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৩
হেমলক

জানিয়ে দিলেম। এর থেকে ওর মনের মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া হতে পারে। নিজের ভয় ভাবনা নিয়েই ও এলিয়ে থেকে স্বামীকে আদৌ গ্রাহ্য করে দেখছে না, সেই কথা মনে পড়লে নিজেকে শক্ত করে নিতে চেষ্টাও হয়ত মনে জাগবে। ফলেও ঠিক তাই-ই ঘটলো।

 আমায় ও এক সময় জিজ্ঞেস করলে, “আচ্ছা ওঁর হঠাৎ কি হ’ল বলুন ত? অসুখটা কি?”

 গম্ভীর মুখে জবাব দিলেম, “যে অসুখে তোমার খোকা গেছে, যার প্রভাবে তোমার ডলি আস্তে আস্তে যাচ্ছিল, সেই একই অসুখ। সাপের বিষ, মিশর-পিরামিডের থেকে পাওয়া প্রাচীন কালের এক অতি মহার্ঘ্য বস্তু—অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, ‘হেমলক’ নাকি ওর নাম।

 ইলা একটা অস্ফুট আর্ত্তনাদ করে উঠলো, “সয়তান! সয়তান! এত করেও ওর সাধ মিটলো না। আমার চূড়ান্ত সর্ব্বনাশ না করে ও ছাড়বে না সে আমি জানি, আমি তা’ জানি।”

 একান্ত গাম্ভীর্য্যপূর্ণ শান্ত স্বরে ছোট্ট করে প্রশ্ন করলেম, “ও,—কে?”

 ইলা চোখ বুজে হাত দুটো কঠিন বলে মুঠো করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে বোধ করি নিজের এতদিনকার ছড়িয়ে-পড়া স্নায়ুগুলোকেই শক্ত করে নিতে প্রাণপণে যুঝছিল, ঠিক সেই অবস্থার মধ্যে থেকেই কঠিন বলে উচ্চারণ করলে, “দাদা! মরার বাড়া তো আর গাল নেই,—এতদূরেই যখন এসে পৌঁচেছি তখন আর কিসের ভয়? সব কথাই আমি আপনাকে আজ খুলেই বলবো। তারপর যা’ হবার হয়েই যাক। শপথ ভঙ্গের পাপ যদি হয় নরকেই না হয় পচবো, তা’তেই বা কি? আর এমন করে দগ্ধাতে আমি পারছি নে। আপনি যদি এখানে না আসতেন, আজ আমার কি দশাই হতো!”