পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
১১৬

 সেই সঙ্গে মহাকালের অদৃশ্য খাতায় আমার ভবিষ্যৎ আগুনের অক্ষরে লিখিত হয়ে গেল। তার ঘরে ছিল এক অপূর্ব্ব রূপসী হিন্দুযুবতী। তাকে হিন্দুগ্রাম থেকে তার আত্মীয়-পরিজন সব্বাইকে খুন করে তাকে হরণ করে এনেছিল ঐ পাঠান সর্দ্দার। মেয়েটি কাপ্টেনের পায়ের উপর আছড়ে পড়ে তাঁর স্মরণ চাইলে, যতক্ষণ না স্বীকার হলেন, পা ছেড়ে সে কিছুতেই উঠলো না। সে এক অপূর্ব্ব সুন্দরী পাঞ্জাবী কিশোরী, যোড়শ বৎসর অনুত্তীর্ণাপ্রায় বালিকা। তিনি অগত্যা তাকে তাঁর ক্যাম্পে নিয়ে এলেন। সেই সঙ্গে একটি মাস কয়েকের নেহাৎ অপোগণ্ড শিশু। তাকে শুদ্ধ না এনে উপায় রইলো না। ক্যাপ্টেন অনেক চেষ্টা করেও তাকে ফেলে অসতে কিছুতেই ওকে বাধ্য করতে পারলেন না। সে এক হাতে শিশুকে বুকে চেপে অন্য হাতে তাঁর পা চেপে পড়ে রইলো। মানুষের দুর্ব্বলতাই তার সবচেয়ে বড় শত্রু। যে আফ্রিদি সর্দ্দারকে তিনি নিজের হাতে হত্যা করেছেন, তারই পুত্রকে নিজের ঘরে স্থান দিলেন—নিজ হস্তে অতি বিষাক্ত বিষবৃক্ষের চারাটি রোপণ করলেন!

 যুদ্ধান্তে ওলপিণ্ডিতে ফিরে আর্য্য-সমাজী মতে শুদ্ধি করিয়ে সেই নিরপরাধ মহা-অপরাধিনী সমাজ স্বধর্ম্ম স্বজনবিচ্যুতা অভাগিনী মেয়েটিকে তিনি বাধ্য হয়ে নয়, ভালবেসেই বিয়ে করলেন। এই সত্যকার কাহিনী অবশ্য সাধারণ্যে গোপনই রইলো। ছেলেটিও শুদ্ধি হলো, তার নাম দেওয়া হয়েছিল সূর্য্যকান্ত হাজরা। স্ত্রীর সত্যাগ্রহে বিপন্ন হয়ে রূপমুগ্ধ পতি চন্দ্রকান্ত হাজরা নিজ পুত্র বলেই তাকে লোকসমাজে পরিচিত করলেন। এরপর গোমতী হাজরার একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে। হাজরা সাহেব তাদের দুজনের জন্যেই একত্র একইভাবে লালন-পালন ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিলেন। নিজের