পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৯
হেমলক

 কয়েকদিন পরে ক্যাপ্টেন হাজরা হঠাৎ হার্টফেল করে মারা গেলেন।

 স্বামীর সঙ্গে তাঁর বাড়ী যাবার দিন স্থির হয়েছে, হঠাৎ সূযি এসে দেখা দিল। তিন বৎসরে আরও রুক্ষ আরও বলিষ্ঠ সে হয়েছে। প্রথম সম্ভাষণে জানালে সে তার পৈতৃক সম্পত্তি দখল করতে এসেছে। আমি যাবার পূর্ব্বে যেন সমস্ত বুঝিয়ে দিয়ে যাই। সে বিবাহ করেছে, বউ আনবে। সামান্য নগদ টাকা এবং নিজস্ব বস্তুগুলি ছাড়া সমস্তই তার জন্যে রেখে বিদায় নিতে উদ্যত হলাম। মনে একটা বিজাতীয় ঘৃণা বোধ হতে থাকলেও মায়ের কাছের শপথ তো ভুলে যাবার নয়। ওঃ, মা হয়ে এত বড় শত্রুতা কেউ সন্তানের সঙ্গে করে?

 সূযি নগদ টাকার হিসাব চাইলে। টাকার দলিল-পত্র অতি সামান্যই, তাও তো আমার স্বামীর দেওয়া পাঁচ হাজারেরই অবশিষ্ট টুকু—স্বামীর সঙ্গে পূর্ব্বেই আমার নিজস্ব সামান্য সামান্য জিনিষগুলি পাঠিয়ে দিয়েছিলুম, নিজেরা দুজনে তাঁর মোটরে একটু এখানে সেখানে দেখে শুনে যাবো বলে। সূয্যি সে কথা মানলে না, অকথ্য কটুবাক্যে গালাগালি দিয়ে নালিশ করার ভয় দেখালে, বললে, ‘জোচ্চর! সয়তানী! দেখাচ্চি তোকে মুখে লাথি মেরে, টাকা আমার আদায় হয় কি না। আমার পৈতৃক ধন, তুই নেবার কে?’

 আর সহ্য করা গেল না। উঃ, কি নিদারুণ ভুলই যে একটি মুহূর্ত্তের আত্মবিস্মৃতির বশে উন্মাদ হয়ে গিয়ে করে বসলাম! এই সমস্ত তারই প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া মাত্র। সর্ব্বনাশ তখনই আমার ঘটে গিয়েছে। অপমানের জ্বালায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কি করতে কি করেছি! সবেগে বলে উঠলাম, “পৈতৃকটা কার, কে তোমার পিতা? তোমার বাপ তো একটা আফ্রিদি ডাকাত,—তাকে মেরে ফেলে মাকে আর তোমাকে উদ্ধার করে এনে আমার বাবাই