পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
১২০

তােমাদের দয়া করে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার যথেষ্ট ঋণ শােধ তো করেছ,—আর নয়, এই মুহূর্ত্তে চলে যাও। তােমার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই।”

 অতি নিকটে বজ্রাঘাতের শব্দে মানুষ যেমন বিহ্বল হয়ে পড়ে, সামান্য কয়টি মুহূর্ত্ত মাত্র তেমনি হতভম্ব হয়ে থেকে সূর্য্যকান্ত যেন প্রলয়াগ্নির মতই জ্বলে উঠল, “ইলা! মরবার সাধ হয়েছে? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। কেটে টুকরাে টুকরাে করে তাের হাড় মাস আঁস্তাকুড়ে ছড়িয়ে দেবাে, জানিস্!”

 আমারও কি জানি কেমন করেই তখন খুন ঘাড়ে চেপে গিয়েছে, সর্ব্বশরীর ভয়ে কেঁপে উঠলেও তখনও নিবৃত্ত হতে পারলেম না, নির্ম্মম হয়ে গিয়ে বলে উঠলেম, “নারী-হরণকারী নরঘাতক আফ্রিদি বর্ব্বরের ছেলে এ ছাড়া আর জানেই বা কি?—করবেই বা কোন ভাল কর্ম্ম।”

 হঠাৎ নিজেকে কতকটা সংযত করে নিয়ে সূর্য্যকান্ত সম্বিৎ স্বরে জিজ্ঞাসা করলাে, “বাপ তুলে বারে বারে গাল দিচ্চো বােন হয়ে, এ’ও কি সম্ভব? যা বলছো তার প্রমাণ দিতে পারবে?”

 আপদ চুকবে ভেবেই আর কিছু না ভেবে উৎসাহের সঙ্গেই উত্তরে বললাম, “বেশ, লিখিত প্রমাণই তােমায় দিচ্চি।” ছুটে গিয়ে বাবার সেই সাঙ্ঘাতিক স্বীকারােক্তি নিয়ে এসে ওর গায়ের উপর ছুঁড়ে দিলেম। তার পর দূরে সরে গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে নিজেকে বিজয়ী-বােধে প্রতীক্ষার সঙ্গে আত্মপ্রসাদ অনুভব করতে আরম্ভ করেছি, কানের মধ্যে আগুনের একট। হল্কার মতই ছুটে এসে প্রবিষ্ট হ’ল—“বাঁচালে আমায় তুমি শ্রীমতী ইলা দেবী। আমি যে প্যানপেনে বাঙ্গালী কুত্তার বাচ্চা নই, খাঁটি সীমান্ত পাঠানদের খাঁটি আফ্রিদি বাচ্চা, এর চেয়ে প্রার্থনীয় আমার পক্ষে