সে পিছন ফিরিয়া চলিতে উদ্যত হইয়াই ফিরিতে বাধ্য হইল, চন্দ্রকুমার ডাক দিয়াছেন। সুনীতি ফিরিয়া দাঁড়াইলে মৃদু মৃদু হাসিতে হাসিতে কহিতে লাগিলেন, “ছাই বুঝেছ! যদি বুঝতেই পারতে তা’হলে কি আমায় বলতে না যে, ‘আমার বাবা তাে তুমিই, তবে আবার বলা হচ্ছে কেন যে তােমার বাবা এলেও পারবে না’! বাঃ কি লেখাপড়াই শিখলি এতদিন ধরে? একটা ‘হক’ কথা বলতে ভরসা রাখিস্ না! আরে, চল্লি কোথায়? শোন্, শোন্, রান্না আর করতে তােকে হবে না, না হয় আজ নাই বা খেলুম! কি, নাঃ যা, যা, রাঁধগে যা, নাই বা রাঁধবি কেন? কেন শুনি? খেতে দিচ্ছিনে তােকে? ও-সব কিনা অম্নি হয়? মাগ্না নাকি? একটা মেয়েছানা পােযা বড় চাট্টিখানি কথা কিনা! রাঁধবি নাতো কি করবি? মেয়েমানুষে তিন তিনটে পাশ করেছে বলে কি বাপকে কিং জর্জ্জ করে দিয়েছে নাকি? যা, যা,·····”
সুনীতি এ অপমানের ঘায়ে মূর্চ্ছা গেল না, বৎসরাবধি এ সমস্ত কথা সে ত অহােরাত্রই উঠিতে বসিতে ক্রমাগতই শুনিতেছে। এর চেয়ে আরও কত কত মন্দ কথাও তাকে শুনিতে হইয়াছে, যে সব কথা অপর কেহ মুখে উচ্চারণ করিতে সাহস করিলে চন্দ্রকুমার হয়ত স্বহস্তে তাকে চাবুক-পেটা না করিয়া জলগ্রহণ করিতেন না, কিন্তু “তেহি নাে দিবসাগতাঃ” চন্দ্রকুমার আজতাে আর সে চন্দ্রকুমার নাই!
দুই
ঝি নাই, ঠিকে ঝি হইলেও বাড়ীর মােটা কাজগুলি সে-ই দু’বেলা করিয়া দিয়া যায়, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, জল-বাটনা, ঝাঁট-পাট সমস্তই; পাঁড়ে শুধু রাঁধেই না—বাজারও করে, খামখেয়ালী গৃহস্বামীর ফাইফরমাস সমস্তই সে খাটে, এক রান্না সাতবার করিয়া গরম