পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৩
হেমলক

কামড়েছে। তোমার জন্যে হেমলক চূর্ণে মেশাব বলে বিষদাঁত থেকে বিষ সংগ্রহ করছিলুম যাতে পনের মিনিট সময়ও না পাও। ভুক্তমাত্রেন—উঃ! ডাক্তার! শোন,—আমায় একবার তুমি বাঁচিয়েছিলে, আর একবার বাঁচাও, দয়া করো। শপথ করছি ইলাকে আমি ক্ষমা করবো। ভারতবর্ষ থেকে চলে যাব, ওঃ দোহাই আল্লার,” —সে সবেগে মাটিতে বসে পড়ল, বসে বসে ও মাতালের মত টলতে লাগল।

 আমার মানবিকতা প্রচণ্ড বলে আমার অন্তরে এসে আঘাত করলো। ফকিরের আদেশ মনে পড়লো। ‘সকল প্রকার বিষক্রিয়ায় এই ঔষধ মন্ত্রৌষধি হবে। শ্রুতমাত্র তুমি দিতে ঈশ্বরের কাছে বাধ্য থাকবে।’ দ্রুত উঠে পড়লাম। হয়ত সেই ঈশ্বরের কাছে এবং মানব সমাজের কাইে ঘোর অপরাধে অপরাধী হতে চলেছি জেনেও গুরুর আদেশ আমার বিবেক অগ্রাহ্য করতে পারল না। বললাম, “শোন সূর্য্যকান্ত! ওষুধ তোমায় আমি দোব, কিন্তু—”

 সূর্য্যকান্ত মরণাহত বাঘের মতই গর্জ্জে উঠল, “সূর্য্যকান্ত! কে তোমর সূর্য্যকান্ত? আমি গিয়াসউদ্দিন আব্বাস খান,—কাফেরের দেবতার নাম দিয়ে আমায় সয়তান বানাতে চেয়েছিল সেই বাঁদীর বাচ্চা বেঁড়ে সয়তানটা—ইয়া আল্লা! শালা সাপ আমায় কিনা শেষে তার কাছে হার মানালে।”

 সূর্য্যকান্ত অথবা গিয়াসউদ্দিন আব্বাস খান, অকস্মাৎ মর্ম্মান্তিক যন্ত্রণায় তীব্র একটা আর্ত্তরব করে মেঝের উপর লুটিয়ে পড়ল, তার শাকবর্ণ মুখ একবার সুতীব্র বিক্ষোভে আকুঞ্চিত হয়েই থেমে গেল। নীল ঠোঁটের দু’পাশ দিয়ে খানিকটা সাদা ফেনা গড়িয়ে পড়ল।