পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

করে, চালে একটি ধান একটি কাঁকর থাকিলে রক্ষা থাকে না, রান্নায় ঝাল হইলে বাটীশুদ্ধ ব্যঞ্জন তার গায়ে গিয়া পড়ে, ঝাল নুন কম হইলে চারিদিকে ছড়াছড়ি হয়, তৎক্ষণাৎ নূতন তরকারী মাছ রাঁধিয়া দিতে হয়। অবশ্য সময় সময় নূতন করিয়া রান্না করিতেও যে হয় না, তাও নয়। সুনীতিরও তার নিজের অংশের জিনিষগুলিকে কখনও মশলা বাড়াইয়া, কখনও মশলা ধুইয়া নূতন মশলা দিয়া নবীন মূর্ত্তিতে সরবরাহ করিতে হইয়া থাকে। সুনীতি নুন লঙ্কা তেঁতুলগােলা দিয়া ভাত যেটুকু না খাইলে নয়, খায়; পাঁড়ে দই মিষ্টির পয়সা পায়। এরকম উপদ্রব বেশীদিন কে সহিবে? বামুন ঠাক্‌রুণ দুজন দুমাসও কাটাইতে পারে নাই, তারপর কতজনই আসিল গেল। প্রাদেশিকতার কোনই বাছবিচার করা হয় নাই। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব্বোত্তর-অংশের সমস্ত জেলার, উড়িষ্যা বিহারের দারভাঙ্গা, ভাগলপুর, পাটনা হইতে উত্তর-পশ্চিমের গােরখপুর কেহই এ বাড়ীর রান্নাঘরে পদার্পণ করিতে বাকি থাকে নাই, যে একবার আসিয়াছে, সে আর তাে আসে না এবং সাধ্যপক্ষে অপরকেও আসিতে বাধা দেয়। এক আধজন দুঃসাহসী মুখের উপর জবাব করিতে গিয়া মারও তো খাইয়াছে। লােক পাওয়া এ বাড়ীতে খুবই কঠিন।

 সুনীতি ভোরে উঠিয়া বাসি-বসন পােড়া-কড়া লইয়া মাজিতে বসিল। রান্নাঘর সে রাত্রেই রান্নার পর ধুইয়া রাখিয়াছে। উনান ধরিতে দেরি হইবে, চায়ের কেৎলি ও সমস্ত সরঞ্জাম সে তেলভরা প্রাইমাস ষ্টোভের কাছে সাজাইয়া রাখিয়া বাসনগুলি দ্রুতহস্তে মাজিতেছিল। রাসনমাজা কাজটাতেই বড় বেশী কষ্ট হয়, বাবা যদি ঝিটাকেও অন্ততঃ না তাড়াইতেন। কিন্তু একথা ভাবিয়া লাভ কি? তার বাবা যদি ‘বাবাই’ থাকতেন তবে এসব অস্বাভাবিক