পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

 একদিন একান্ত আগ্রহভরে সুনীতিকে অসিয়া বলিলেন, “আজ একজন মিডিয়ামের আসবার কথা আছে, তাঁর কাছে তোমার মা’র খবর পাবো, তিনি নিশ্চয় আসবেন, তুমি যাবে?”

 সুনীতি তার বাবার পুরাণো সোয়েটারটা রিপু করিতেছিল, হাত হইতে ফেলিয়া দিয়া সচকিতে দাঁড়াইয়া উঠিল, বিস্ফারিত নেত্রে চাহিয়া আগ্রহ-ব্যাকুল কণ্ঠে বলিয়া ফেলিল, “যাবো বাবা, আমায় নিয়ে চলো।”

 “বেশ তৈরী হও,—” বলিয়া চন্দ্রকুমার স্ত্রীর জীবিতকালের মত কোঁচান মিহি ধুতি, হাতে গিলা-করা আদ্ধির পাঞ্জাবী ও পাতলা উড়ানী পরিয়া সাজিয়া আসিলেন; স্ত্রীর মৃত্যুর পর এসব আলমারী হইতে বাহির করা হয় নাই। এতকালের পরিত্যক্ত সোয়েডের পামশুজোড়া পায়ে ফোস্কা পড়াইয়া দিতে থাকিলেও তাদের মোহ ত্যাগ করিতে পারিলেন না, আজ বহুদিনের অদর্শনের সমস্ত বিরহ বেদনা প্রশমিত করিয়া, তপ্তনিদাঘের সমুদয় তাপদাহ জুড়াইয়া দিয়া নব বর্ষার স্নিগ্ধ সলিল সম্পাতের মত সুকুমারী আসিবে, সে তো তাঁর এমন অপরিচ্ছন্ন বিশৃঙ্খল বেশভূষা সহ্য করিতে পারিবে না!

 মিডিয়াম এদেশী নয়, একজন বিদেশী পুরুষ। তিনি প্রথমতঃ আর একজনের বিদেহী আত্মীয়ের সঙ্গে মিলন-সেতু বাঁধিয়া দিয়া তারপর চন্দ্রকুমারের প্রতি প্রশ্ন করিলেন:

 “কা’কে চান?”

 আবেগ বিগলিত বিচলিত কণ্ঠে চন্দ্রকুমার উত্তর করিলেন, “আমার স্ত্রীকে, আমার সুকুমারীকে—”

 “আমি বলে দেখি,—হ্যালো মিষ্টার স্মিথ! আপনি কি এঁর স্ত্রীকে ডেকে আনতে পারবেন?—”