পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

 চন্দ্রকুমার আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়া যেখানে যত ছোট-বড় মিডিয়ামের খবর সংগ্রহ করিতে পারিল, ছুটিয়া বেড়াইতে লাগিল, কিন্তু সত্যই তো আর ব্যাপারটা অত সহজসাধ্য নয়! টেবিল ঠোকা, প্ল্যানচেট নামান, অনেক কিছুই হইল, তত্রাচ এমন কিছুই মিলিল না যাহাতে অন্তর হইতে বিশ্বাস করিতে পারা যায় যে, সত্যই তার অপগতা প্রিয়-পত্নী বিদেহী সুকুমারীই তার সঙ্গে কথাবার্ত্তা কহিতেছে! সে রহস্যালাপ, সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তো কোথাও মিলিল না!

 প্রায় একটি বৎসর পরে আবার সেই পূর্ব্বতন মিডিয়াম তাদের “সাইকীক্যাল রিসার্চ সোসাইটীতে” দেখা দিলেন। চন্দ্রকুমার সুনীতিকে খবর না দিলেও সে তার বাবার সাজসজ্জার বহর দেখিয়া আন্দাজে ধরিয়া ছিল,—এবার সঙ্গ লইল।

 সুকুমারী এবার অন্য সুরে কথা কহিল, বলিল, “কেন তুমি অমন করে আমায় দিনরাত টানাটানি করছো? নিজেও দুঃখ পাচ্চো, আমাকেও দিচ্চো, আমায় ভুলে যাবার চেষ্টা কেন করছে না?”

 আহতের আর্ত্তস্বরে চন্দ্রকুমার উচ্চকণ্ঠে চীৎকার করিয়া কহিয়া উঠিলেন, “তোমায় ভুলে যেতে বলছো? বেশ! তাহলে আমায় তুমি আর চাও না? তোমায় আমি স্মরণ করে দুঃখ দিচ্চি? এমন নিষ্ঠুর হয়ে গেছ তুমি?”

 উত্তর দিল সুকুমারীর বিদেহী আত্মা,—না সূক্ষ্মদেহী সুকুমারী, আত্মা তো আর কথা কয় না, কহিল,—অর্থাৎ পেনসিলে ভর দিয়া লিখাইল—

 “হাঁ সব্বাই হয়, নিষ্ঠুর না হলে যদি পৃথিবীর দিকে শতচক্ষু হয়ে চেয়েই থাকতো,—উন্নতি করতো কেমন করে? তুমি আমায় আর ডেকো না, ডাকলেও আর আমি আসবো না।”