পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

বা কেন? তার সমস্ত শরীর আনন্দে আশ্বাসে কৃতজ্ঞতায় রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল, দুটি চোখ দিয়া অজস্র ব্যথা-বিজড়িত আনন্দাশ্রু ঝরিয়া পড়িতে লাগিল, অভিমানে, আনন্দে সংমিশ্রিত গদগদ-কণ্ঠে অর্দ্ধস্ফুটস্বরে সে ক্রমাগত উচ্চারণ করিতে লাগিল—“মা! মা! ওমা, মা! মাগো! মা আমার! আমার মা! আমার মা!”

 এতদিনকার সমুদয় দুঃখ অভিমান যেন নিঃশেষ হইয়া সেই অশ্রুজলের সঙ্গে তার মনের মধ্য হইতে মার্জ্জিত ও ধৌত হইয়া যাইতে লাগিল। অপরাধের কুণ্ঠায় মরিয়া গিয়া মনে মনে ক্ষমা চাহিতে চাহিতে পুনঃপুনঃ বলিতে লাগিল, “কত অন্যায় কথা তোমার উদ্দেশ্যে আমি বলেছি মা! স্বার্থপর বলে কত অনুযোগই যে করেছি, সে-সব তুমি নির্ব্বোধ বলে আমায় ক্ষমা করবে ত? আমি তো স্ত্রী নই, মা নই, কেমন করে তাঁদের মনের কথা বুঝতে পারবো? আমার বাবা এত দুঃখ পাচ্চেন, শুধু তোমার তাঁকে বৎসরান্তে একটি দিনের দেখা দেওয়া,—না তাও নয়, একটুখানি লিখে জানানো মাত্র, এইটুকুও তুমি কেন পারবে না বল্লে,—এই ভেবে কত রাগ করেছি, কিন্তু তুমি তো চুপ করে থাকতে পারোনি,—এই তো সুযোগ পেতেই আপনি ছুটে এসেছ,—একজন অপরিচিতের কাছে—”

 “সুনীতি!”

 বজ্র নির্ঘোযের মত আহ্বান আসিল। সচকিত সুনীতি উঠিয়া দাঁড়াইয়া দেখিল রুদ্র মূর্ত্তিতে চন্দ্রকুমার অদ্ভুত মুখভঙ্গী করিয়া দাঁড়াইয়া আছেন।

 সুনীতির দুইচক্ষে তখনও শতধারা বহিতেছিল—সে তাহা মুছিতেও ভুলিয়া গেল, হঠাৎ আবার এ হইল কি! খুবই খোস মেজাজে আজ তো চন্দ্রকুমার পরিপাটিরূপে স্নান আহার করিয়া সুখে নিদ্রা যাইতেছিলেন, ঘুম ভাঙ্গিয়া সহসা এ মূর্তি কেন?