পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাঁচ

 সন্ধ্যার অল্প পরেই ট্যাক্সি হইতে নামিয়া দুটি লোক ঘরে আসিয়া ঢুকিল, দ্বারের কপাট তাদের জন্যে খোলাই ছিল। এতক্ষণ পর্য্যন্ত পিতা-পুত্রী উভয়েই প্রতীক্ষ্যমান হইয়া সংশয়াচ্ছন্ন চিত্তে পুনঃ পুনঃ দেওয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িটার কাঁটার দিকে চাহিতেছিলেন। বিলম্ব দেখিয়া ততোক্ষণে ভয়ে সুনীতির বুক ঢিপঢিপ করিতে আরম্ভ করিয়াছে, যদি তারা না আসে, তখন কি যে হইবে, সে কথা ভাবিতেও তার গায়ে কাঁটা দিয়া উঠে।

 যারা দুজন ঘরে ঢুকিল, তাদের মধ্যের একজন সেই সকাল বেলার ছেলেটি,—আর একজন? সুনীতি সবিস্ময়ে দেখিল, মাথায় মস্তবড় পিঙ্গলবর্ণ জটা, মুখে ছাইমাখা ঈষৎ পীতাভ শ্মশ্রু সংযুক্ত এক গেরুয়া আলখাল্লা-পরা সাধু।

 সাধুদের তো একে বয়স বুঝাই যায় না—তার উপর মুখে ভস্মমাখা, মাথার উপর চূড়াকারে বাঁধা কপিসবর্ণের সেই প্রকাণ্ড জটার ছায়ায় মুখটি অর্দ্ধাবগুণ্ঠিত। চন্দ্রকুমার ভক্তিভরে প্রণত হইতে যাইতেই সাধুজী ত্রস্তে বেশ খানিকটা পিছু হটিয়া গিয়া দুই কর সংযুক্ত করিলেন, গম্ভীর নিঃস্বনে উচ্চারণ করিলেন, “নারায়ণ। নারায়ণ!” তাঁর সাথী সসম্ভ্রমে চন্দ্রকুমারকে প্রণাম পূর্ব্বক কহিল, “ওঁরা যে সর্ব্বভূতে নারায়ণের অধিষ্ঠান দেখেন কি না,—প্রণাম তো কারু কাছেই ওঁরা নেন না, জ্যেঠামশাই! শুধু বলবেন, “নমো নারায়ণায়ঃ।” চন্দ্রকুমার প্রীত হইয়া ঐ কথাই বারে বারে উচ্চারণ করিলেন।

 পূজার ঘরে আসিয়া চক্রে বসা হইলে, সাধুর হাত দিয়া লেখা বাহির হইল,—“কি, ব্যাপার কি! এমন করে রাষ্ট্র-বিপ্লব করছো