পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

কেন? আমার সাধের পাতা সংসারটাকে একেবারে লণ্ডভণ্ড ছন্নছাড়া করে ছাড়বে নাকি ভেবেছ?”

 চন্দ্রকুমার ঈষৎ আগ্রহান্বিত হইলেও বিষম অপ্রতিভভাবে একটু আমতা আমতা করিয়া উত্তর দিলেন, “তুমি কেন আমায় ভুলে মোক্ষলাভে মন দিতে গেলে, আমি তোমার কাছে যাবার জন্যে পথ চেয়ে দিন গুনছিলুম, কেন আমার সে স্বপ্ন তুমি এক আঘাতে ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিলে?”

 “হুঁ, স্বপ্ন ভাঙ্গলে শিশুরাই তো হাত-পা ছুঁড়ে ককিয়ে কেঁদে ওঠে। তুমিও যে তাদেরই মধ্যে একটি,—সে কথা আমার মনে ছিল না। যা হোক খুব প্রতিশোধটাই নিলে! মোক্ষ তো চুলোয় চলে গেছে, এই একটি বছর ধরে প্রত্যেক মানুষের মনের দোরে দোরে উঁকি পেড়ে পেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, একমাত্র চিন্তা—কার দ্বারা মহারাজের দরবারে গিয়ে হাজির হই! অবশেষে এই মহাত্মার, এই সাক্ষাৎ মহাপুরুষের দর্শন লাভ করে তবেই এই দুস্তর পারাবার পার হয়ে চরিতার্থ হতে পেরেছি। এখন প্রভুর আজ্ঞা হোক দাসীকে কি করতে হবে?”

 চন্দ্রকুমার আনন্দে ও অভিমানে অবরুদ্ধপ্রায় সজলকণ্ঠে কোনমতে কহিলেন—“কেন তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে সুকুমারি?”

 চটপট উত্তর হইল, “আমি কি সখ করে মরেছি না কি যে ওই প্রশ্নই করো? আত্মহত্যা করলে বরং ওকথাটা বলতে পারতে, আমারই কি তোমাদের ছেড়ে আসবার খুবই সাধ ছিল নাকি! নিজের কর্ম্মফলে যার ভাগ্যে যা লেখা আছে, কার সাধ্য তাকে রদ করে? কিন্তু এও বলি, তাই বলে এতটাও আবার ভাল নয়! একদিন তো আবার তোমার আমার মিলন হবেই, অনর্থক ওসব কাণ্ড করে এইটি করছো যে, এর ফলে চকা-চকীর মতন চিরকাল