পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
২৮

ধরে দুজনে দুর্লঙ্ঘ বাধার দুদিকে থেকে যাব, কিছুতেই মিলতে পারবো না।”

 চন্দ্রকুমার হা হা করিয়া ছেলেমানুষের মত কাঁদিয়া উঠিলেন। এদিকে তাঁকে আত্মস্থ হইবার অবসর প্রদান করিয়া কাগজের পেনসিল চালনা বন্ধ হইয়া রহিল।

 তিনি কোঁচার খুঁট তুলিয়া যেই চোখ মুছিলেন, অমনি আবার লেখা হইল—“ছিঃ, কেঁদো না, আমার ওতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি আর এখানে থাকতেই পারছি না, যাই।”

 ব্যগ্র ব্যাকুলতার সঙ্গে চন্দ্রকুমার আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিলেন— “সুকু! না না, এই দেখ আমি শান্ত হচ্চি, আমায় তুমি এক্ষুণি ছেড়ে যেও না।”

 সুকুমারী লিখিলেন, “আমি আবার যাই কোন্ চুলোয়? যাবার কি তুমি আমার কোন উপায় রেখেছ? যখন থেকে তোমায় ভূতে পেয়েছে, রাতদিন তোমার সঙ্গে সঙ্গেই তো ঘুরছি। জানো না তো, মেয়েটাও সাতটা জন-মজুরের খাটুনি খেটে খেটে প্রাণে না মরে, সেদিকেও তো অনেকটা আমায় শক্তি দিতে হচ্ছে। দেখতে দেখতে কত কাহিলই যে আমি হয়ে গেছি। তুমি না পাও, এই স্বামীজী তো আমায় দেখতে পাচ্ছেন, উনিই বলুন না।”

স্বামীজী নীরবে ঈষৎ সম্মতিসূচক মাথা ঝুঁকাইলেন।

 চন্দ্রকুমারের বহুক্ষণ বাঙ্‌নিষ্পত্তি হইল না। অবশেষে ক্ষীণস্বরে কহিলেন, “আমায় তুমি ক্ষমা করো।” তারপর সহসা আরও গাঢ়কণ্ঠে কহিয়া উঠিলেন, “আমি আবার মানুষ হবো, শুধু তুমি আমায় মধ্যে মধ্যে এসে দেখা দিও, কথা কয়ো, আমায় ত্যাগ করো না।”

 “তা’ তো করবো, কিন্তু করবো কি করে?”

 এমনি করে?”