আলোছায়া
তারা ছিল দুটি বোন, সুজাতা ও সুদর্শনা। আনন্দনাথের পিঠাপিঠি দুটি মেয়ে। বয়সে দুজন অবশ্য যমজ নয়, চেহারাতে এবং স্বভাবেও দুজনকার মধ্যে বিলক্ষণ প্রভেদ, অথচ দুই বোনে বাহিরে প্রভেদ যাই থাক, অন্তরে তারা এক আত্মা, এক প্রাণ। ‘দুই শরীরে একই মন’—একেই বলা হয়। বড় বোন সুজাতা শান্ত স্নিগ্ধ কোমল প্রকৃতি, চেহারাতেও তার সেই অন্তররূপের অভাব সুপরিস্ফুট। এমন মিষ্ট মধুর হাস্যমুখী মেয়ের কদাচিৎ দেখা মেলে। জলধৌত চিক্কণ নব-পত্রিকার মত বর্ণশ্রী, চোখে বুদ্ধিমত্তার ও উজ্জ্বলতার সঙ্গে লজ্জাকুণ্ঠার মৃদুভাব, স্বল্পভাষিণী অথচ বাক্যবিন্যাসে সুনিপুণা, যে কেহ এর সংস্পর্শে আসে একে মায়া না করিয়া পারে না। পড়াশোনা সযত্নেই করে, কত অল্প বয়সে বাংলা, সংস্কৃত কত ভাল রূপেই আয়ত্ত করিয়াছে,—পরীক্ষা লইলে আশ্চর্য্য হইয়া যাইতে হয়, অথচ তাহাকে দেখিলে কার সাধ্য বাহির হইতে তার বিদ্যাবত্তা বুঝিতে পারে। ছোট ছোট খণ্ড খণ্ড কবিতাও সে এই বয়সে লিখিতে পারে; তবে সে-সব কবিতার এখনও একটি মাত্র পাঠিকা ব্যতীত দুটি নাই।
ছোট বোনের নাম সুদর্শনা। নামটি যতই জমকালো, মেয়েটির রূপ অবশ্য ততটা অনিন্দিত নয়, বরং প্রবীণা মহল বড়বোনের সঙ্গে তুলনা করিয়া এর রোগা লম্বা গড়নকে একটু নিন্দার চোখেই দেখিতেন। “দিন দিন মেয়ে হচ্ছেন যেন একটি তালপাতার সিপাই!”—এই রকম সব সমালোচনা মধ্যে মধ্যে উঠিয়াও পড়ে। অবশ্য মেয়ের দিদি বা তার পিতামহ—দাদুর সামনে এ কথাটা বুদ্ধিমতীরা সহজে উচ্চারণ করেন না; যেহেতু বোনের নিন্দা শুনিলে