পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫
আলােছায়া

যেমন শোনা যায় নানা সাজে তারা নিয়মিতরূপে ফুল সাজায়— ফুল পরে—এরাও তেমনি পুষ্প চয়ন, পুষ্প বিন্যাস, পুষ্পালঙ্কারে ভূষিত হইতে পারিলে কৃতার্থ হয়। সোনার মাকড়ী বালা হার দিনে দু’বার মায়ের কাছে জমা রাখিতে ছোটে, মা বিরক্ত হইলে বলে, “কি করবো, ও যে রঙ্গন ফুলের মালার সঙ্গে মিল খাচ্ছে না, কানে দেখ না কি রকম তারে গেঁথে চুনির মতন রঙ্গন-কুঁড়ির কুণ্ডল পরেছি।”

 মাও তাদের অপূর্ব্ব শিল্পী, ভাবপ্রবণতায় তিনিও কারও চাইতে কম যান না, চাহিয়া দেখিয়া মুখটা একটু প্রফুল্ল করেন, কিছু না বলিলেও মুখের ভাবে স্পষ্ট ফুটিয়া ওঠে, “তা বড় মিথ্যা বলিসনি, যা হোক তোদের রুচিটা তাহলে গড়ে দিতে পেরেছি।”

 সুজাতার জন্য নয়, সুদর্শনার জন্যই তাঁর মনে একটা ভয়-ভাবনা ছিল, পুত্র-সন্তান বিলম্বে আসার জন্য কোলের মেয়েটিকে অনেকদিন পর্য্যন্ত ছেলের সাজে সজ্জিত রাখিয়াছিলেন, সে সেই দাবীটা কিছুতেই ছাড়িতে রাজী হয় নাই, আকাশ নীলের রেশমী ফ্রক, গোলাপী, লাল, ধপধপে সাদা আদ্ধির সৌখীন কাটের কত সাধের তৈরী করানো ফ্রক মেয়ে কিছুতে পরিতে রাজী হয় নাই। যেদিন তার ভাই জন্মিল, সে নিজেই উপযাচক হইয়া সেদিন কিন্তু তার দিদিকে আসিয়া বলিল, “খোকা বড় হয়ে পরবে, ওসব— এবার তোলা থাক, আমি মায়ের দেওয়া ঐ ঘাঘরাগুলোই পরি তাহলে, কেমন?”

 মহা খুসী হইয়া দিদি তাকে সাজাইতে বসিল, কিন্তু চুল তখনও তো ছোট করিয়াই কাটা, রিবন বাঁধা আর ঘটিল না, এই বিপত্তির সম্ভাবনাতেই দূরদর্শিনী মায়ের পূর্ব্বাহ্ণেই তৈরী-রাখা রং-মিলানো লেশদার কুঁচিদার টুপিগুলা অগত্যা কাজে লাগিল। সাজগোজ সমাধা করিয়া দিয়া হাসি-হাসি মুখে অতৃপ্ত-নেত্রে বোনটিকে নিরীক্ষণ