একান্ত আগ্রহ সত্ত্বেও তাঁর পিতৃপ্রতিম শ্বশুর তাঁকে এবার সঙ্গে লইয়া গেলেন না, ছেলেটি এখনও নিতান্তই শিশু। সুদর্শনাদের পিসিমারা ইতিমধ্যেই সেখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছেন।
আলো সরিয়া গিয়াছে,—যদিও দূরে থাকিয়াও রশ্মি সংহত করে নাই; তথাপি তাহা মৃদু ও ক্ষীণ, ছায়া টিঁকিবে কি লইয়া?
সুজাতা ও সুদর্শনার জীবনযাত্রার ধরাবাঁধা পথ এক নিয়মে চলিতে থাকিলে কি হইবে, সূর্য্যাস্তের সমস্ত রশ্মিচ্ছটা হারাইয়া পৃথিবীর যে দশা হয়, তাদের ঠিক তেমনিই ধারা বিষাদ বিষন্ন করিয়া দিল। তথাপি মনের মধ্যে ঔৎসুক্যভরা আগ্রহের সীমা নাই, এবার দুর্গাপূজার ছুটিতে বহুদিন পরে দেশে যাওয়া হইবে। আঃ! কতকালই যে তারা বাড়ী ছাড়িয়া আসিয়াছে, সুজাতা সেখানে কত আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য কাহিনী শোনায়, কত অপরিচিত অপরিচিতা, পরমাত্মীয় ও পরমাত্মীয়াদের গল্প করে, তাদের কথা সুদর্শনা কিছুই মনে করিতে পারে না। একটা আবছা গোছের ভাসা-ভাসা দু’চারটি কথাই স্মরণপথে মধ্যে মধ্যে ভাসিয়া উঠে মাত্র।
দাদু কাশী যাওয়ার আগেই কার্য্যব্যপদেশে কিছুদিনের জন্য অন্যত্র যাওয়া হইয়াছিল। হাঁটাপথে পাল্কী করিয়া যাওয়া হইল, দুইটি ছোট ছোট নদীতে বোটের উপর পাল্কী তুলিয়া পার করা হইল, সেও বেশ একটা বিচিত্র ব্যাপার। কিন্তু তার চাইতে অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিল যখন বিশালকায় (সেকালের) শোন নদের উপরকার পণ্টুন ব্রীজের উপর দিয়া তাদের পাল্কী চলিতেছিল। সেদিনের বর্ষার শোন নদ—সে এক ভীষণ ভৈরব মূর্ত্তি। তার গর্জ্জন প্রায় সমুদ্র গর্জ্জনেরই একটি পকেট সংস্করণ, তরঙ্গভঙ্গ উত্তাল। সেদিন অপরাহ্নে বাতাসটা একটু জোরেও হয়ত বহিতেছিল, ওরা দুই বোনে পাল্কীতে বসিয়া স্থির করিল, ঝড় উঠিয়াছে। পাল্কীর দরজা বন্ধ করিয়া দিয়া