পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৪৬

ভাল ডিটেকটিভের গল্প, এমন কি অত বড় যে কাউণ্ট মণ্টিকৃষ্টোর বিরাট কাহিনী—তাও হপ্তায় হপ্তায় আসিয়া সে তাকে ও সুজাতাকে শুনাইয়াছে। উপহার সে প্রায়ই দেয়। লইতে বড় লজ্জা করে, এ লইয়া যথেষ্ট মান-অভিমানও চলিতে থাকে, অবশেষে না লইয়া ছাড়ান থাকে না, অবশ্য লোভনীয় বস্তুতে ছেলেমানুষ তারও যে কিছুমাত্র লোভ ছিল না, সে কথা কেমন করিয়া বলা যায়? তবে কিনা পরদ্রব্যকে লোষ্ট্রবৎ দেখিতে ওরা নিত্যই আদিষ্ট হয় কিনা, মনে বড়ই কুণ্ঠা আসে।

 প্রথমে সুজিত এদের বাজে গল্পই বলিত। একদিন দিদির কাছে একটি ইংরেজী ডিটেকটিভের গল্প শুনিয়া, সুজিত আসিলে সে সঘন ঝঙ্কার তুলিল—“যান যান, কে শুনতে চায় আপনার ছাই-পাশ গল্প! দিদির বেলায় যত ভাল ভাল বেছে বেছে রেখে, আমার বেলায় খোকাখুকির মতন—হ্যাঁঃ, শুনছি আমি তাই।”

 সুজিত মুখ টিপিয়া ঈষৎ হাসিল, “তুমি কি খুকি নও?”

 আর রক্ষা আছে। সুদর্শনা সর্পিনীর মতই ফুঁসিয়া উঠিল, “তাই না! আমি খুকি? চলুন না দাদুর কাছে, চলুন, কি বলেন তিনি শুনবেন চলুন, মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ ধরেছি না? বাল্মীকি রামায়ণের পদ্যানুবাদ করছি না? আমায় খুকি বলা হচ্চে!”

দারুণ ভীতিপূর্ণ শিহরণের অভিনয় করিয়া সুজিত কহিল, “দেবি! ক্ষম দোষ; মূর্খজনে রোষ নাহি কর। আমি কি জানিব বল মহিমা তোমার!”

 “কী ভীষণ দুষ্টু আপনি!” সুদর্শনা ঘুঙুর-গাঁথা মল সঘনে বাজাইয়া সরোষে প্রস্থান করিল। অবশেষে দিদির অশ্রুতপূর্ব্ব ঐ বৃহত্তর উপন্যাসের ঘুষ কবলাইয়া মিটমাট হইল।