পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৪৮

তার ভাল হইবে। সুধীরকে সে যদিও চোখ তুলিয়া দেখে নাই, তবে আবছা দেখায় বুঝিয়াছে চেহারাখানা তার ভাল। তবে তাকে কথা কহাইতে চায়, এই যা’ বড় দোষ! সুদর্শনা মুখচোরা মোটেই নয়, বরঞ্চ মুখরাই,—কিন্তু কে জানে কেন এর কাছে আবোলতাবোল বকিতে একটু যেন বাধবাধ ভাব হয়। তাছাড়া দরজার বাহিরে এ বাড়ীর মেয়েরা ‘আড়ি পাতিতে’ খুব ওস্তাদ! শ্বশুর বাড়ীর দুটিরাত্রে পড়াশোনা, শিবপূজার কথা, ভাইবোনদের পরিচয় সে দিয়াছে, শুধু শেষের রাত্রে সুধীর তাহাকে প্রশ্ন করিয়াছিল, “আমায় তোমার খারাপ লাগছে না?” সে উত্তর দিয়াছিল, “খারাপও না,—ভালও না?’ এই লইয়া তার ক্ষুদে-ননদটি হাসিয়া হাসিয়া গালে একটা ঠোনা মারিল, চোক পাকাইয়া বলিল, “ইস্ ‘খারাপও না, ভালও না’ কেনগা? আমার অমন সুন্দর দাদা, ‘ভালও না’র মানে?”

 তা’ হলে কথা কওয়াত মুস্কিল! সরল-সত্যকথা বলিতেই যে দাদু এ যাবৎ তাকে শিক্ষা দিয়াছেন। ‘মন-রাখা’, ‘অর্দ্ধ সত্য’ অথবা মিথ্যা বলা ত ওর অভ্যাস নাই।

 বাড়ী ফিরিবার পর সুজিত যখন আসিয়া প্রশ্ন করিয়া বসিল, “কিগো দর্শনা, বরটিকে কেমন লাগলো?”

 সে সগর্ব্বে দ্বিধাশূন্যচিত্তে তৎক্ষণাৎ জবাব করিল, “ছাই”!

 “ছাই?—কি ছাই? তোমার মনটা ছাই? না, আমার যে মুখ অমন অসঙ্গত প্রশ্ন করে, তা’তেই ছাই?”

 “যান! বড় আপনি ইয়ে হয়েছেন, আপনার সঙ্গে আর একটি কথা আমি কইবো না, এই সোজা বলে দিচ্চি!”

 “পুঁজি করে রাখা নেহাৎই দরকার, বাজে খরচ কেনই বা করবে, সে তো জানা কথাই। আমি কিন্তু কইবো, যতই তুমি মুখে ছাই ঢালো না কেন।”