পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯
আলােছায়া

 সুদর্শনা রাগে গর গর করিয়া ঝঙ্কার ঝাড়িল, “মাগো! কি বিশ্রী মন আপনার। আমি কখন আপনাকে ওকথা বল্লুম? দিদিকে বলে দেবো,—আজকাল আমায় আপনি বড্ড জ্বালাচ্ছেন। কেন, আর কি কোন কথা নেই?”

 সুজিত শান্ত-গাম্ভীর্য্যের সহিত চিন্তার ভাণ করিয়া বলিতে লাগিল, “আর কোন কথা,—হ্যাঁ, আছেই ত, সে ভদ্রলোক আসছেন কবে? তুমি বা সেখানে কবে যাচ্চো—”

 আর রক্ষা আছে! সাপের লেজে পা পড়িল! সুদর্শনা গরম তেলে-পড়া বেগুনের মত ছ্যাঁক করিয়া উঠিল, “তা’ আর নয়! আমি আবার যাচ্চি ওদের বাড়ী! দাদু আমায় সেখানে যেতে দেবেন না, কষ্টে দাদুকে ছেড়ে তিনটি দিন ছিলুম, সে আপনি কি করে বুঝবেন।”

 সুজিত মুখ টিপিয়া হাসিল,—“আর দাদু যদি দিদিটির মতন ঠেলে পাঠিয়ে দেন?”

 সাহঙ্কারে উত্তর দিল, “সব্বাই দিদি নয়গো! ও যেমন ভাল মেয়ে, আমি তো সেরকম নই; আমি যাব না, দাদুর পা’ধরে পড়ে থাকবো,নড়বোই না।”

 “দাদু যদি নড়া ধরে তুলে ব্রুহ্যামে পুরে দোর বন্ধ করে দেন? পাহারাওলা সঙ্গেই তো থাকবে, সে তখন ম্যানেজ করে নেবে। কেউ কারু হক ছাড়ে? আমি কি ছেড়েছি?”

 সুদর্শনার অভিমান কানায় কানায় ভরিয়া উঠিতেছে, কোনমতে আত্মাহঙ্কার বজায় রাখিতে চাহিয়া প্রবল বেগে মাথা নাড়া দিল,—“আমি যাবো না।” চোখে জল ভরিয়া আসিয়াছে এবার বুঝি পড়ে পড়ে।

 সুজিত ঈষৎ অপ্রতিভ হইল, নরম সুরে কহিল, “তুমি একটি পাগল!”