পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৫০

 “আপনি? আপনি একটি—”

 “কি? থামলে কেন? গর্দ্দভ?”

 এবার সজল চোখের মেঘে শরতের রৌদ্র ফুটিয়া উঠিল, “আহা, তাই কি কখনও বলতে পারি? আপনি হচ্চেন বড় ভগ্নিপতি, বয়সে কত বড়।”

 সুজিত সজোরে হাসিয়া ফেলিল, “বলছিলে-ত, আবার বিনয় দেখাচ্ছেন।”

 সুদর্শনা নিজেকে জয়ী বুঝিয়া সংহত অভিমানে বিনীত বাক্যে জানাইল, “সেই জন্যেই ত বল্লাম না। যাকগে পাঁচ-পরেদের কথা থাক, অনেকদিন আপনি একটা গল্প বলেননি, আজ তো এখানে খেয়ে যাবেন, খাবার পর গল্পের আসর যদি না বসে তাহলে কিন্তু ভীষণ আড়ি দেবো। দাদুর কাছে অনেকক্ষণ যাইনি, আমি চল্লাম।”

 বিবাহিত জীবন তাহাকে কোন ফ্যাসাদে ফেলে নাই। সেই পণ্ডিতমশাই, মাষ্টারমশাই ও দাদুর কাছে সংস্কৃত কাব্যপাঠ চলে। সুধীর দৈবাৎ নিমন্ত্রিত হইলে রাত্রিবাসের নিমন্ত্রণ সে পায় না। সাঙ্গোপাঙ্গো সঙ্গে সুদর্শনা সাজসজ্জা করিয়া দ্বিপ্রহরে একবার দর্শন দিয়া আসে। এ একরকম মন্দ নয়। উপরন্তু শ্বশুরবাড়ীর বস্ত্রালঙ্কার, তত্ত্ব-তাবাস তা নেহাৎ মন্দ আসে না। ওদিকে তার খুব বেশী লোভ না থাকুক, তবু সে যতই হোক, ভিতর হইতে মেয়ে বই তো আর ছেলে নয়। অলক্ষ্যে অলক্ষ্যে প্রকৃতি ঠাকুরাণী তার ভাঙ্গাগড়া কাজটুকু নীরবে সমাধা করিতে তো আর ছাড়েন না। এত আস্তে সে মেসিনটি চলে, বাহিরে নিঃসাড় নীরব, কেহ কিছু জানতেও পারে না।

অকস্মাৎ বসন্তের সাজানো বাগান প্রচণ্ড ঘূর্ণি-বাতাসে লণ্ডভণ্ড হইয়া গেল। সৌরপতি রাহুগ্রস্ত হইলেন। অনারোগ্য আয়ুক্ষয়কর