পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫
আলােছায়া

তাহার সমস্ত মনটাকে বিষ দন্ত দিয়া সবলে দংশন করিতে লাগিল। সে কিছুতেই ভাবিয়া পাইল না, ইহার পর সে বাঁচিয়া থাকিবে কেমন করিয়া, কাহাকে লইয়া এবং কাহারই বা জন্য?

 অন্যান্য অনেকেরই মত এ ব্যাপারে নিমন্ত্রিত হইয়া সুধীরও এ বাটীতে আসিয়াছিল। কয়েকদিন ধরিয়াই সে দানসাগর শ্রাদ্ধের সমারোহের মধ্যে সকলের সঙ্গে মিশিয়া রহিয়া গেল। কাজকর্ম্ম সব শেষ হইবার পর একদিন সুযোগ মিলিলে সে সুদর্শনার শোকসংবিঘ্ন মুখের দিকে চাহিয়া স্নেহ পরিপূর্ণ সহানুভূতির সহিত কহিল, —“শুনলুম, তুমি কিছুতেই শান্ত হতে পারছো না, খাওয়া-দাওয়াও প্রায় ছেড়ে দিয়েছ; কিন্তু সকলের কথাও তো তোমার ভাবা উচিত। দাদুকে কি তুমি একলাই হারিয়েছো? আমাদের কি কিছুই খোয়া যায়নি?”

 একান্ত দুঃখের সহিত উচ্চারিত এই কথাগুলি সুদর্শনা স্তব্ধ থাকিয়াই শুনিল। শুনিতে শুনিতে অকথ্য বেদনার সহিত তার মনে হইল, যে লোক তাকে এই সামান্য কয়টামাত্র দিনই দেখিতে পাইয়াছে, সে যখন এমন বিষাদিত কণ্ঠে তাঁর সম্পর্কে কথা বলিতেছে, তখন তার দুঃখ যে কত বড় তার কি কোন হিসাব করা চলে? উঃ, এ যেন কিছুতেই সহ্য করা যায় না।

 তবু যেদিন দুজনকার চোখের জল একসঙ্গে মিলিত হইয়া সেই যে একই খাতের মধ্যে দুই চিত্তধারাকে একত্রে বহিয়া আসিতে সহায়তা করিল, ইহা তুচ্ছ নয়। জীবনে এই সর্ব্বপ্রথম তার মনে হইল, বিবাহের পর হইতে এই বাৎসরিক কাল ধরিয়া এ লোকটিকে সে যতটা দূরবর্ত্তী বলিয়া জানিত, হয়ত এ তা নয়। এই দেড় বৎসরের মধ্যে ধীরে ধীরে কখন যে কেমন করিয়া এই চির অপরিচিত পরের চেয়েও পর তার নিকটে আসিয়া পড়িয়াছে, তাহা