পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সর্ব্বকালের হাওয়া

কেমন করিয়া কি হইল কিছুই বোঝা গেল না, ঘটনাটা বড়ই অকস্মাৎ ঘটিয়া গেল। অবশ্য ব্যাপারটা সংসারের পক্ষে একান্তই অপ্রত্যাশিত নয় এবং এ-সব ঘটনা প্রত্যহ ঘটে না, অকস্মাৎই ঘটে; তবে কি না একবারে এতটাই!

 পরাণ কৈবর্ত্ত চিরদিনের রগচটা লোক, সে-কথা তার ঘরের লোকই বা শুধু কেন, পাড়া-প্রতিবেশীদেরও অজানিত নয়। এইখানেই ত তার জন্ম-কর্ম্ম সমস্তই, তার রীতি প্রকৃতি তাই না জানেই বা কে? কিন্তু কথা এই যে, ওই ধরণের স্বভাবের লোকদের সঙ্গে কারবারে আসিতে হইলে অপর পক্ষদেরও একটুখানি বেশী সহ্যগুণের প্রয়োজন থাকে। এরা ঠিক দাবানলও নয়, কালানলও নয়, মাত্র তৃণগুচ্ছ। এক মুহূর্ত্তেই তাহারা দপ করিয়া জ্বলিয়া উঠে, কিন্তু সে জ্বলন তাদের তেমনি বেশীক্ষণও থাকে না, যদি না ইন্ধন যোগাইয়া দেওয়া হয়; তবে অল্পক্ষণেই আপনার আগুনে আপনি জ্বলিয়া ছাই হইয়া নিবিয়া যায়। সেই ছাইও আবার বাতাসে উড়িয়া যাইতে বেশীক্ষণ সময় লাগে না, কিছুক্ষণ পরে পূর্ব্বচিহ্নের অস্তিত্ব খুঁজিলে অল্পই পাওয়া যায়। পূর্ব্বে যখন পরাণের মা থাকোমণি বাঁচিয়া ছিল, তা’র হাজামজা বাবাঠাকুরের দোর-ধরা তাবিচ-কবচের বোঝা-পরা একমাত্র ছেলেকে সে সদাশঙ্কিত সাবধানতার সঙ্গেই চোখে চোখে রাখিয়া মুখে মুখে তার প্রয়োজন সাধন করিয়া গিয়াছে। ক্ষুধা পাইবার পূর্ব্বেই সাজানো অন্ন, তৃষ্ণানুভবের আগেভাগেই জলের ঘটি, বিশ্রামের জন্য সর্ব্বদাই পরিপাটিরূপে স্বহস্তে প্রস্তুত শীতলপাটি পাতা শয্যা, যখন যা কিছু প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় বস্তুজাত তার মায়ের হাত হইতে সে লাভ করিয়াছে। বাপ তার জন্য খুসীই ছিল। মায়ের লালন সেও তার