“দেবে ত দেবে! ছেলে কি তোমাদের আমি পেটের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি নাকি? এমন জ্বালাও ত দেখিনি।”
উত্তর হয়ত দেওয়া কঠিন। কিন্তু কথাই আছে, বুদ্ধিমান যেখানে কথা খুঁজিয়া পায় না, মূর্খ সেখানে নির্ভয়ে জবাব চালাইয়া যায়। থাকো বধূর চোপা শুনিয়া চটিয়া উঠিল, “চুরি করবি কেন? সাত জন্মের বাঁজি যে তুই, ছেলে হবে কোত্থেকে! তিলুর মেয়ে আতুসীর সঙ্গে বিয়ে আমি ঠিকই করেছি।”
বৌ বলিল, “দে দিকিনি, কেমন দিবি, দেখি! সতীন আমি সইবোনা, তাই এই মা কালী আর বাবাঠাকুরের নাম নিয়ে দিব্বি খেয়ে বলে দিচ্ছি, ঘরে আনবি কি সগুষ্ঠি বেড়া আগুনে পুড়ে মরবি। দরজায় শেকল দিয়ে ঘরের চালে আগুন জ্বালিয়ে দেব; এই সোজা বলে রাখলুম।”
এরপর শাশুড়ী তারস্বরে বধূর উদ্দেশ্যে অনেক কটুবাক্য বর্ষণ করিতে লাগিল, কিন্তু যতই দম্ভ প্রকাশ করুক না কেন, ছেলের দ্বিতীয়বার বিবাহ দিবার ব্যবস্থা সে আর ভরসা করিয়া করিতে পারিল না। অগত্যা মাস পাঁচ-ছয় পরে তিলু কৈবর্ত্ত তার ডাগর মেয়ে আতুসীর অন্যত্র বিবাহ দিয়া দিল। জয়দুর্গা হাসিয়া গড়াইয়া পড়িল, হাসিতে হাসিতে শাশুড়ীকে মন্তব্য প্রকাশ করিল, “কি, ছেলের বিয়ে দিলে না যে বড়? বলে,—‘সাধ যায় বোষ্টম হ’তে, প্রাণ যায় মোচ্ছব দিতে।’
শাশুড়ী নিজের মনের জ্বালায় নিজেই জ্বলিতেছিল, বৌয়ের এই কাটা ঘায়ে লবণ নিষেক তার সহিবে কি করিয়া; তাই দপ্ করিয়া জ্বলন্ত হইয়া উঠিল, দাঁত কিড়মিড় করিয়া অকথ্য ভাষায় গালি দিল, পরে বলিল, “তুই না ম’লে কোন ভাল মানুষের মেয়েকে পুড়িয়ে মারবার জন্য তোর হাতে তুলে দেবো না, ভাল খাকি?”