পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১
সর্ব্বকালের হাওয়া

 কথাটা নিছক সত্য! জয়দুর্গাও তা ভাল করিয়াই জানে, আর জানে বলিয়াই তার এই বিজয়োল্লাস! শাশুড়ীর এই বুক-ভাঙ্গা দুঃখে গালিগালাজকে তুচ্ছ করিয়া লইয়া ফেরৎ জবাব উহ্য রাখিয়াই একান্ত সহানুভূতির সুরেই সে বলিল, “আহা তা’ সত্যি!” তারপর আবার মুখ টিপিয়া ঈষৎ ক্রুর ও বক্রহাসি হাসিল; তার পর টিপ্পনি কাটিয়া বলিল, “শুধু তাই নয়, ঢাকের দামে আবার মনসাশুদ্ধ বিকোবে কিনা, দাদাশ্বশুরের পিণ্ডির জোগাড় করতে গিয়ে নিজের পিণ্ডি চটকাবার ব্যবস্থা হয়ে ওঠবার যে ভয় রয়েছে।”—

 হি-হি হি-হি হাসির শব্দে থাকোমণির সর্ব্বাঙ্গে গরম জলের ঝাপটার মতই গরম রক্তের অন্তঃস্রোত ছুটিয়া বেড়াইতে লাগিল। জঘন্য গালি দিয়া চীৎকার শব্দে কাঁদিয়া বাড়াভাতের কাঁসি লাথি মারিয়া ফেলিয়া দিয়া অবশেষে ছেলে বাড়ী ফিরিলে তাহার কাছে নিজের পরাভবের কথা নালিশ করিল। এতদিন যা করিবার সে নিজে করিয়াছে, ছেলেকে বউয়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিতে কোনদিন চেষ্টা করে নাই। কেন করে নাই তা অবশ্য সঠিক বলা যায় না, সবটাই যে বধূর প্রতি পূর্ব্বতন ভালবাসার জের তা নাও হইতে পারে, নিজের কর্ত্তৃত্ব শক্তির প্রতি একটা স্থির বিশ্বাসও এর মধ্যে ছিল। ঘরকন্নার মধ্যে সে তার স্বামীকেও কোনদিন টানাটানি করেন নাই, ছেলেকেও না। বেটাছেলের পক্ষে বাহিরের কাজই যথেষ্ট; ওরা কি এইসব ‘ঘরকুটুলী’ ব্যাপারের মধ্যে থাকিতে পারে, না ডাকিতে আছে? কিন্তু সহ্যেরও ত একটা শেষ আছে। ছেলের কাছে এতদিনকার জমাইয়া রাখা মনের কথা আজ থাকোমণি কান্নাধরা গলায় একটি একটি করিয়া সমস্তই খুলিয়াই বলিল; বলিতে বলিতে বারে বারে পিছন ফিরিয়া খিড়কির দরজার দিকে চাহিয়া দেখিতেছিল পুকুরঘাট হইতে জয়দুর্গা ফিরিয়া আসিতেছে কি না।