থাকোর মনেও সে বিষয়ে আফশোষ বড় কম ছিল না। কান্নাকাতর কণ্ঠে সে উত্তর করিল, “কি করি বল ধন, খাল কেটে যে কুমীর এনে ঘরে তুলেছি, বলে কি না ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবে। যা দস্যি ছুঁড়ি, অনায়াসে তা পারে।”
“ইস্, পারলেই হোল। বল্লি না কেন আমায় সে কথা, দেখে নিতুম সে কাকে পুড়িয়ে মারে। দিতুম এক বোতল কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়ে শলাই ধরিয়ে। শুধু অমন কনেটাকে তুই ঐ মাদিহাতীটার হুকমীতে কিনা ছেড়ে দিলি!”
ছেলের পৌরুষ জাগিতে দেখিয়া হঠাৎ থাকোর সহজ জ্ঞান ফিরিয়া আসিল—“কি যে বলিস্ গোপাল! এই ত ওর সবে পনেরটা বছর বয়স। রাধা ঠাকরুণ বলছিল—আঠার বছর বয়স পার না হলে মেয়েদের বাঁজা বলা যায় না। যাক্ যাক্, ও সব কথা তুই ভাবিস্ নে, সে আমি সময় বুঝে যেমন হয় করবো।”
দুই
সময় বুঝিবার কিন্তু সময় আর হইল না। থাকোমণি পৌত্র-মুখ না দেখিয়াই মরিল, জয়কালী শাশুড়ীর মৃত্যুকালে সেবা করিয়াছিল। জমানো টাকা ছেলেকে ও হাতের সোনার তাগাগাছি বউকে দিয়া গলার মাদুলিশুদ্ধ বিছে হার সে অনাগত পৌত্রের জন্য রাখিয়া গেল। রাধাঠাকরুণ বলেছেন আঠারো বছর বয়স হলেই জয়দুর্গার সন্তান হবে।
আঠারোর পর আরও বছর দুই গেল, ছেলের দেখা নাই। তা নাই থাক, তার জন্য আজ কেহ কাঁদিতেছে না। যে কাঁদিত সে তার কান্না সঙ্গে লইয়া গিয়াছে। পরাণের স্ফূর্ত্তির প্রাণে ছেলেমেয়ের জন্য কোন প্রতীক্ষিত উৎকণ্ঠাই ছিল না। জয়দুর্গার মনের মধ্যে