পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫
সর্ব্বকালের হাওয়া

 তারপর অকস্মাৎ সেই চরম পরিণতির কাল আসিয়া উপস্থিত হইল। পূর্ব্বরাত্রে সারারাত্রি অনুপস্থিত স্বামীর নিকট জয়দুর্গা গরুর খড় কুচাইতে কুচাইতে এমন সুরে ও বাক্যে কৈফিয়ৎ চাহিয়া বসিল যে, পুরুষের দেহ ধারণ করিয়া সে রকম অভিভাবকের মত মুখভঙ্গী এবং কণ্ঠকাঠিন্য সহ্য করা সম্ভবপর নয়। পরাণ হাতে শক্ত মুঠি বাঁধিয়া খানিকটা সামনের দিকে আগাইয়া আসিয়া দাঁত মুখ খিচাইয়া জবাব দিল, “যে চুলোতেই থাকি না কেন, তোর বাবার তাতে কি এলো গেলো?” জয়দুর্গা যথাকার্য্যে নিরত রহিয়াই সদর্পে প্রত্যুত্তর করিল, “আমার বাবার কচু, জানা দরকার আমার। আমি শুনতে চাই, কোন্ চুলের দোরে মরতে গেছলে সারারাত ধরে!”

 রাগে পরাণ ফুলিতেছিল, গুম্ হইয়া জবাব করিল, “যমের দক্ষিণ দোরে, যাবি?” “নিয়ে চলো না সঙ্গে করে, যাচ্ছি”—বলিতে বলিতে কুক্ষণেই সে তার বিচালী কাটা খাঁড়ার মত একান্ত তীক্ষ্ণ ফলা বাঁট ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইল, “সে হলেও বুঝি, যমেই বা তোকে নেয় কোথায়? তুই যে যমেরও অরুচি?”

 কথায় উত্তর না দিয়া পরাণ প্রচণ্ড রাগের মাথায় যাহা করিয়া বসিল তাহা এই,—সে মুহূর্ত্ত মধ্যে পরিত্যক্ত বঁটিখানা তুলিয়া লইয়া দুইহাতে বাঁটখানা চাপিয়া ধরিয়া জয়দুর্গাকে যেখানে-সেখানে চোপাইয়া দিল। আর্ত্তনাদের পর আর্ত্তনাদ, তার পরই রক্তাক্ত কলেবরে জয়দুর্গা সংজ্ঞা হারাইয়া সশব্দে মেজের উপর পড়িয়া গেল।

তিন

 সকলেই মনে করিয়াছিল পরাণের ফাঁসী হইবে। তার দক্ষিণ ধারের প্রতিবেশী তার বাড়ীখানা কিভাবে দখল করা যায় তার