জন্য গভীর চিন্তায় ডুবিয়া থাকিয়া নানাপ্রকার ফিকির ফন্দি বাহির করিতেছিল, এমন সময় এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটিয়া সমস্তই উল্টাইয়া দিল।
জয়দুর্গা সঙ্গে সঙ্গে মরে নাই, সদরের হাসপাতালে তৃতীয় দিনে তার জ্ঞান হইতেই হাকিম সদলবলে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করিতে আসিলেন। অত্যন্ত দুর্ব্বল এবং কণ্ঠাগত প্রাণ হইলে কি হয়, ডাক্তারের মতে যখন তার মৃত্যুর আর অধিক বিলম্ব নাই, তখন তাঁদের কর্ত্তব্য পালন অবিলম্বে না হইলে চলিবে কিরূপে? প্রথম প্রশ্নের উত্তরেই সে বলিয়া বসিল—তার স্বামী তাহাকে আঘাত করে নাই, সে নিজেই নিজেকে আহত করিয়াছে।
প্রশ্নকারী সবিস্ময়ে কহিলেন, “সে কি, পাশের বাড়ীর লোক যে দেখেছে বঁটি ছিল পরাণের হাতে?”
নারী কহিল, “তোমার বউ যদি তোমার সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যে হতে যায়, তুমি তার হাত থেকে অস্তর ছিনিয়ে নিতে যাবে না?”
প্রশ্নকারী প্রতি প্রশ্নের জটিলতায় ক্ষণকাল বিমূঢ় হইয়া রহিলেন, পরে ঐ কূট প্রশ্নের কুটিলতা এড়াইয়া গিয়া পুনরায় প্রশ্ন করিলেন, “তাহলে তুমি বলতে চাও তোমার স্বামী তোমায় মারে নি?”
“ও মা, বলতে চাই কি রকম? তোমাদের দরকারে হয়কে নয় করবো নাকি? কেন, আমায় ও মারবে কেন? আমি কি ওর মতন কু-চরিত্তির যে ও আসবে আমায় খুন করতে?”
“তুমিই বা হঠাৎ আত্মহত্যা করতে গেলে কি জন্যে?”
“শোন কথা! আত্মহত্যে হঠাৎ না করে চোখে কাজল পরে, কপালে টিপ কেটে, পায়ে আলতা দিয়ে, ঠোটে রং লাগিয়ে তোমাদের বড় নোকেদের ঘরে করে বুঝি? নাঃ বাপু, আমাদের সে-সব নেই,— আমরা করলে এমনি হঠাৎই করি।”