পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৫
হেমলক

রাজার রাজ্য চালনা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা, কৃপণ সুদখোরের সুদ-গোনা সমস্ত বন্ধ রেখে আবহকাল অপেক্ষা করতে হয়, সমুদ্রের সমস্ত ঢেউ-এর ওঠাপড়া বন্ধ হলে স্নান করতে নামবার মত।

 কলকাতায় বাস করলে যোগাভ্যাসের কাজ হয়। যোগদর্শনকার পতঞ্জলী বলেছেন, “যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ।”

 যাক্ ধান ভানতে শিবের গীত এলো নাকি! কোথায় এই শেষ বসন্তের গুমোট করা সন্ধ্যায় কলকাতার এক পুরোণো গলির ছোট্ট একটা বাড়ীতে খানকয়েক পুরাতন চেয়ার ও একটা টানাওলা টেবিলের সামনে বসে হিসেব কষা, আর কোথায় দার্শনিকের সমুচ্চ মতবাদ। হিসাবে একটুখানি ভুল থেকেই যাচ্ছে, ঠিক ক্যালকুলেসান করে জিনিষটাকে দৃঢ় প্রত্যয়ের উপর দাঁড় করাতে পারছি না। একটা প্রচ্ছন্ন সংশয় থেকেই যায়। নাঃ, আরও ভাল করে রিসার্চ্চ করা দরকার। যদি নিজের একটা ল্যাবরেটোরী থাকতো! এরকম লুকোছাপা করে অন্য কাজের আড়াল দিয়ে অনেক কিছু মিথ্যা রচনা করে এসব কাজ কখন সাক্‌সেসফুল হয়? অথচ উপায়ও তো নেই।

 জানলাটা সামনের দিকে খোলাই ছিল, হঠাৎ সশব্দে সেটা বন্ধ হয়ে গিয়ে ফের সঙ্গে সঙ্গেই সজোরে খুলে আবার ঝনাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল। তারপর গল্পের সেই “ঢাকন খোল, নাচন দেখ”-র মতই এই খোলে এই পড়ে। টেবিলের কাগজপত্র এদিকে ওদিকে ফর্ ফর্ করে উড়ে ঘরময় ছড়িয়ে পড়লো, মায় আমার সেই মিল না হওয়া হিসেবের চোতা কাগজখানাও। ঝড় উঠেছে। বেশ বড় রকমের ঝড়। এতটুকু বোবা গলির ভেতরকার এই ছোট্ট ঘরটুকুতেই যার এতটা দাপাদাপি, বাইরে না জানি সে কি করছে? উঠে গিয়ে জানলার বিদ্রোহী কপাট দুটোকে টানাটানি করে এনে কোনমতে