পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৭৬

ছিট্‌কিনিটা আটকে দিলুম। ইতিমধ্যে কাচের ফ্রেমে বাঁধানো ঠাকুরদাদার ওয়াটার কলারের ফেড-হওয়া এন্‌লার্জ্জখনা হাওয়ার দোলায় দোল খেতে খেতে ধুপ করে দড়ি ছিঁড়ে খসে পড়লো এবং কাঁচভাঙ্গার শব্দ হলো ঝন্‌ঝন্ ঝনাৎ। কি বিপদ! দড়িটা অনেক দিন বদলানো হয়নি, পচে গেছলো নিশ্চয়। কে কি করে, যেটি না হাতে করে করবো তা আর হবে না। অথচ এই অভূতপূর্ব্ব আকস্মিক অনর্থ—আবিষ্কারের অদ্ভুত উত্তেজনায় সারা দুনিয়াই তখন আমার কাছে ঐ পাশের বাড়ীর রান্নাঘর থেকে ভেসে-আসা ধোঁয়ার মতই ধোঁয়াটে।

 খুব জোরে বৃষ্টি পড়ছে জানা গেল। কাল-বৈশাখীর রুদ্র তাণ্ডব শুরু হয়েছে ঐ সঙ্গে। তা না হবেই বা কেন? বসন্তের বাসন্তী সমারোহ আমাদের এই পচা গলিতে না থাকতে পারে, তাই বলে তো আর সে রুদ্র-বৈশাখের রুদ্র-লীলার দাপাদাপির কিছুটা ভোগ করে রেহাই পেতে পারে না। স্থান যেমনই হোক, কালটা তো ঠিকই আছে।

 দরজায় আঘাতের পর প্রচণ্ড করাঘাত চলছিল। হাওয়ার ধাক্কা বলে যতই তাকে উড়িয়ে দিতে চাই, ততই তার উগ্রতা বেড়ে ওঠে। বোধ হয় কোন ঝড়ে-পড়া জলে-ভেজা বিপন্ন মানুষই হবে। আমারই কোন বন্ধু বা আত্মীয়ও তো হতে পারে। দরজা খুলতেই কেউ একজন ছুটে এসে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো, আর সঙ্গে সঙ্গেই হয়ত কোথাকার কোন তার কেটে বা অমনি কিছু একটা বিপত্তি ঘটে আমার ঘরের ইলেক্‌ট্রিক আলোটা ফিউস্‌ড্ হয়ে গেল। এ বড় মন্দ মুস্কিল তো নয়! এখন আমি করি কি? সিগারেট ফুঁকি না, দিয়াশলাই এ ঘরে দুষ্প্রাপ্য, এক সেই রান্নাঘরের কাজের জন্যে যদি ওদিকে থাকে। সেখানে এখন যাবার যো কি, যে প্রচণ্ড ধারায় বৃষ্টি চলছে,