পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৮০

মুখের মত মুখ। তা শুভ্র বা পাণ্ডু নয়, ঈষৎ পীতাভ নীল। যেন হাল্কা করে কপালময় কে নীল বড়ির ফিকে জলে হলুদ গুলে দিয়েছে। চোখ আধখোলা। মনে হয় দৃষ্টিহীন, শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ মনে হ’ল পাওয়া যাচ্চে না, তবে মরেই গেছে! উঃ! কি মহা ফ্যাসাদেই যে ফেললে আমাকে হতভাগা! কে আমার এতবড় শত্রু ছিল? আবারও কব্জি খুঁজে নাড়ী পেলাম না—নাঃ, মরাই ঠিক।

 নিকটবর্ত্তী পুলিশ-ষ্টেশনের ফোন নাম্বার গাইড-বুক দেখে খুঁজে নিলেম টর্চ্চ জ্বেলে। এই সর্ব্ব শরীর-মনের খর-কম্পনের মধ্যে দিয়ে এইটুকু করতেই বেশ পাঁচ সাত মিনিট সময় খরচ হয়েও গেল! রিসিভারটা সবে তুলে নিয়ে কম্পিত স্বরকে কোন মতে ফুটিয়ে তুলেছি,—“হ্যালো!”

 পিছন থেকে হঠাৎ একটা অস্ফুট স্বর ভেসে এলো, “ষ্টপ!”

 স-চমকে টেলিফোন রিসিভারটা ছেড়ে দিতেই সেটা সশব্দে ঘরের মেঝেয় পড়ে গেল। আমি মড়া-কাটা, মড়া-ঘাঁটা মেডিকেল কলেজের মেডেলিষ্ট, সার্জারী পাশ করা ছাত্র, উদীয়মান একজন ডাক্তার, ভূতভয়গ্রস্ত একটা শিশুর মতই চমকিত এবং বলতে কি, আতঙ্কে প্রায় অভিভূত হয়ে উঠে পিছন ফিরে তাকালাম। যার শরীরে ডাক্তারী পরীক্ষায় জীবনী চিহ্ন খুঁজে পাইনি, কয়েকটি মিনিটের মধ্যেই তার একি অচিন্তনীয় পরিবর্ত্তন। অর্দ্ধনিমীলিত নেত্র পূর্ণ বিস্ফারিত, মড়ার মুখের মত বিবর্ণ ললাটে গণ্ডে ঈষৎ শোণিতোচ্ছাস সুপরিস্ফুট—পুনর্জ্জন্ম একেই বলে, না?

 তখন আর কিছুই মনে রইলো না, সুবিপুল পুলকোচ্ছ্বাসে সমস্ত দেহ মন এক মুহূর্ত্তে সবল ও সরস হয়ে উঠলো, যেমনটি হয় বর্ষাজল পেলে তৃণশস্যদের। বালকের মত আনন্দে প্রায় নৃত্য করে— চিৎকারের মতই একটা ধ্বনি করে উঠলেম—“ইউরেকা! ইউরেকা!”