পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩
হেমলক

করেছি। মাস কয়েক সব চুপচাপ কেটে যাবার পর হঠাৎ এক সন্ধ্যায় একখানা অশ্রুজলে বিকৃত চিঠির মধ্য থেকে জানা গেল, দিব্যেন্দুর দিব্যদর্শন (তার ফটো আমায় ওরা পাঠিয়েছিল) ছেলেটি অকস্মাৎ মারা গেছে। কি হয়ে তা’ ডাক্তার ধরতে পারেনি, আর পার্ব্বেই বা কখন? মাত্র এক ঘণ্টার চাইতেও কম সময়ে তার অসুখ আরম্ভ ও শেষ হয়ে গেল। সেই খবর পেয়ে একবার যাবার ইচ্ছে জেগেছিল, কিন্তু সেবারও অবসর পেলাম না।

 এতদিনে সময় পেয়েছি। দিব্যেন্দুর দ্বিতীয় সন্তান জন্মেছে খবর দিয়ে সে যে চিঠিটা দিয়েছিল, সেটা পড়ে আমার মত সংসারাতীত বৈরাগী মানুষেরও কঠিন চোখ দুটোকে শুকনো রাখা শক্ত। ছোটখুকি ডলিকে পেয়ে পুত্রশোকাহতা ডলির মা কোথায় একটু শান্ত হবেন, বড়ই সে আশা করেছিল, ফলে কিন্তু ঘটেছে ঠিক বিপরীত। সুন্দর ফুটফুটে সোনার পুতুল কোলে পেয়েই তার সে কি ডুকরে ডুকরে বুক-ফাটা কান্না, সে যেন কানে শোনা যায় না। থেকে থেকে কাঁদতে কাঁদতে ফিট হয়ে যায়, আর জ্ঞান হলেই ভয়ে দু’চোখ ঠিকরে বার করে চারদিকে চেয়ে চেয়ে দেখে আর আর্ত্তনাদ করে বলতে থাকে, “তুই কেন এলি মা আমার! এ হতভাগীর কাছে তুই কেন এলি? তোকেও মেরে ফেলবে, বাঁচতে দেবে না,—না দেবে না, আমি জানি দেবে না।”

 দিব্যেন্দু লিখেছে, “ডাক্তার আনিয়েছিলুম, ওরা চেঞ্জে যেতে বলে! নার্ভাস্ স’কে হয়েছে, দৃশ্য বদলালে সেরে যাবে, ইলা কিছুতেই এখান থেকে এক পা নড়তে রাজী নয়, বলে, ‘আমার কপাল যে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাবে। যদি বা দুটো দিন সবুর করত, তা’ও করবে না। না যাবে না, আমি যাবো না।’ কি করি বলতে পারো?