পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৫
হেমলক

নিপুণ চিত্রকরের হাতের আঁকা চিত্রের মত সুরচিত একটি চমৎকার ফুল বাগান। দেশে-বিদেশে এমন ফুল এমন লতা কমই আছে যা এই বাগানটিতে নেই। নেই শুধু আম, তাল, তমাল, পনস, নারিকেল, সুপারি, কদম্ব, বকুল প্রভৃতি বড় গাছ একটিও। মাঝমধ্যখানে একটি মার্ব্বেলের ফোয়ারা, সাধারণতঃ অর্দ্ধ-বিবসনা পরীমূর্ত্তিরাই এই সব জলদেবতার তরফে বারিবাহিনী হয়ে থাকে। এখানে তার ব্যতিক্রম হয়েছে। পাথর কেটে তৈরি-করা পদ্মের উপর পদ্মাসনা উপবিষ্টা, দু’পাশ থেকে দুটি শ্বেতহস্তী তাঁর মাথায় জল ঢালছে। পরিকল্পনায় ওরিজিন্যালিটি আছে। ও মানুষটা বরাবরই বেশ একটু ভাবপ্রবণ, রুচিটাও ওর বরাবরই সুরুচি।

 সন্ধ্যা হয়, দৌড়দার সিঁড়ি কয়টা অতিক্রম করে সামনের লম্বাচৌড়া দালানে উঠে হ্যাট-ষ্ট্যাণ্ডে হ্যাট রেখে ওর নির্দ্দেশ মত বাঁহাতি ছোট টেবিল-ঘেরা চেয়ার শ্রেণীর মধ্যের একটায় বসে পড়তেই অনতিবিলম্বে উর্দ্দি-পরা ‘বয়’শ্রেণীর ভৃত্য চায়ের সরঞ্জাম ও খাবারের ডিস বহন করে এনে রাখলে। দু’জনকার মত ব্যবস্থা! দেখে একটু বিস্ময়বোধ করতে বাধ্য হলেম, এই পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সুবেশাসুন্দরী একটি গৃহকর্ত্রীর আবির্ভাব স্বতঃই কল্পনালোকে উদ্ভাসিত হয়ে না উঠে পারেনি। আশ্চর্য্য! আমাদের চা-পর্ব্বের আগাগোড়া শেষ হয়ে গেলেও সেই ঈপ্সিতাকে দেখা গেল না।

 দিব্যেন্দু হয়ত আমার মানসিক বিস্ময় অনুভব করেই ক্ষমা প্রার্থনার হিসাবে ঈষৎ কুণ্ঠার সঙ্গেই নিম্নস্বরে বললে, “আমার স্ত্রীর শরীরটা ভাল নেই, তাই তিনি আসতে পারলেন না, তুমি হয়ত তাঁকে ক্ষমা করবে।”

 সৌজন্য সহকারেই জবাব দিলেম, “নিশ্চয়ই ক্ষমা করব। বিশেষ যখন আমি একজন ডাক্তার।”