পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৯০

‘যে আসছে ওকে নিয়েই আমায় এই সময় চলে যেতে দাও, ও থাকতে পাবে না, ওকে থাকতে দেবে না। সেই থেকে ওই যে কি ওর বাতিক হয়ে গেল, মেয়েটাকে তো চাঁদ-সূযির মুখ আজ পর্য্যন্ত দেখতে দিলে না। বাড়ীর ঠিক মাঝখানের ঘরে সে থাকে, ওঁর কে দূর-সম্পর্কের এক আত্মীয়া কোথায় ছিলেন, তাঁকে আনিয়েছেন; ভাল নার্স আনলুম, তাকে বেবীর নার্সারীর ত্রি-সীমানায় ঢুকতে দিলেন না। ঝি-চাকরদের কারুকে ওর ঘরে যেতে দেয় না, শুধু আমার বাপের আমলের বুড়ো রাখুদা দুধ দুয়ে দেয়, জল এনে দেয়, যেটুকু নেহাৎ দরকার ঐ করে, আর ওঁরা দুজন।”

 কি আর বলি? সন্তানহারা মেয়েদের মস্তিষ্ক বিকৃতির অনেক বিবরণী ডাক্তারী নজীরে পাওয়া যায়, এও তারই মধ্যে আর একটা। আহা অভাগিনী মা! এত সুখ ঐশ্বর্য্য সবই ওর এই মৃত্যুফোবিয়ায় ব্যর্থ হ’তে বসেছে। দিব্যেন্দু অবশ্য আদর্শ স্বামী ও মানুষ, কিন্তু সেও মানুষ বই আর তো অমানুষিক কিছু নয়। সহ্যেরও একটা সীমা আছে।

 দিব্যেন্দু পকেট থেকে একটা মোটা চাবির রিং বার করে বড় বড় ভারী ভারী তালাগুলো খুলতে খুলতে বলতে লাগলো—“জানো ডাক্তার! কাল তুমি যখন এলে, ইলা তোমার সঙ্গে দেখা করতে নীচে নামলো না দেখে তোমায় যে বললুম, ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ’,—সে স্রেফ মিছে কথা। আসল কথা, সন্ধ্যার দিকে সে তার খুকিকে ছেড়ে একটি পাও নড়ে না, তা’ সে যতই কেননা যাই হোক। রাত্রে ঐ ঘরেই তার খাবার যাবে, ঐ ঘরে সে শোবে, তাও ভিতর থেকে প্রত্যেক দরজায় চাবিতালা লাগিয়ে। সে চাবি নিজে না হলে মিসেস্ পাকড়াসী স্বহস্তে বন্ধ করবেন। চাবি থাকে ওঁর আঁচলের রিংয়ে।”