পাতা:খুন না চুরি? - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
খুন না চুরি?
১৩

চাহিল এবং বুড়ীকে দেখিয়া ঈষৎ হাসিয়া নিকটস্থ দুইথানি কুশাসন ইঙ্গিত করিয়া দেখাইয়া দিল। বৃদ্ধাও তাহার সঙ্কেত বুঝিতে পারয়া আমাদের দুইজনকে সেই দুইখানি আসনে বসিতে বলিয়া স্বরং নিকটে দাঁড়াইয়া রহিল।

 “কতক্ষণ এইরূপে কাটিল বলিতে পারিনা। কিন্তু কিছু পরেই অপর দুই সন্ন্যাসী রূপসীর হাত ধরিয়া সেখান হইতে লইয়া গেল। আমি চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিলাম, কিন্তু আমার চীৎকারে কেহ ভ্রুক্ষেপও করিল না। আর কিছুক্ষণ এইরূপে অতিবাহিত হইল। তাহার পরে দেখিলাম, রূপসীর অচেতন দেহ সেই অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করিল। পরক্ষণেই বুড়ী আমার হাত ধরিয়া ঘর হইতে বাহিরে আনিল এবং কত পথ ঘুরাইয়া একটা বাগানের নিকট আমায় ছাড়িয়া দিয়া উর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল।

 “আমিও চীৎকার করতে লাগিলাম, কিন্ত যে স্থানে সেই বদ্ধা আমাকে ছাড়িয়া দিয়াছিল, সেখানে লোকজন নাই বলিলেও চলে। এত চীৎকার করিলাম, এত কাঁদিলাম, কেহই আমার সাহায্যের জন্য আসিল না। এই সময় হইতে আমার আর কিছুই মনে নাই। আমি তাহার পর কি করিলাম, কেমন করিয়া এখানে ফিরিয়া আসিলাম, এখানে আসিয়াই বা কি করিলাম, কিছুই জানি না। যখন রাত্রি হইল, বর আসিয়া উপস্থিত হইল, তখন আমার জ্ঞান হইল; তখন আমি সমস্ত কথা প্রকাশ করিলাম।”

 এই বলিয়া গৌরী স্থির হইল এবং একদৃষ্টে আমার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। আমি তাহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া শোভন সিংকে জিজ্ঞাসা করিলাম,—“আপনার কন্যার গাত্রে কোন অলঙ্কার ছিল কি?”