“বলেন নি কেন।”
“ভয় করেছিল।”
আমাকে ভয় কিসের।”
“আপনি যে মস্ত লোক, দাদুর কাছে শুনেছি। তিনি আপনার লেখা প্রবন্ধ বিলিতি কাগজে পড়েছেন। তিনি যা পড়েন আমাকে শোনাতে চেষ্টা করেন।”
“এটাও কি করেছিলেন।”
“নিষ্ঠুর তিনি করেছিলেন। লাটিন শব্দের ভিড় দেখে জোড়হাত করে তাঁকে বলেছিলাম, ‘দাদু, এটা থাক্। বরঞ্চ তোমার সেই কোয়াণ্টম থিয়োরির বইখানা খোলো।”
“সে থিয়োরিটা বাঝি আপনার জানা আছে?”
“কিছুমাত্র না। কিন্তু দাদুর দৃঢ় বিশ্বাস সবাই সব কিছু বুঝতে পারে। আর তাঁর অদ্ভুত এই একটা ধারণা যে, মেয়েদের বুদ্ধি পুরুষদের বুদ্ধির চেয়ে বেশি তীক্ষ্ণ। তাই ভয়ে ভয়ে আছি অবিলম্বে আমাকে ‘টাইম্স্পেস’এর জোড়মিলনের ব্যাখ্যা শুনতে হবে। দিদিমা যখন বেঁচে ছিলেন, দাদু বড়ো বড়ো কথা পাড়লেই তিনি মুখ বন্ধ করে দিতেন; এটাই যে মেয়েদের বুদ্ধির প্রমাণ, দাদু কিন্তু সেটা বোঝেন নি।”
অচিরার দুই চোখ স্নেহে আর কৌতুকে ছল্ছল্, জ্বল্জ্বল্ করে উঠল।
দিনের আলো নিঃশেষ হয়ে এল। সন্ধ্যায় প্রথম তারা জ্বলে উঠেছে একটা একলা, তালগাছের মাথার উপরে। সাঁওতাল মেয়েরা ঘরে চলেছে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ক’রে, দূর থেকে শোনা যাচ্ছে তাদের গান।
এমন সময় বাইরে থেকে ডাক এল, “কোথায় তুমি। অন্ধকার হয়ে এল যে! আজকাল সময় ভালো নয়।”
অচিরা উত্তর দিল, “সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তাই জন্যে একজন ভলণ্টিয়র নিযুক্ত করেছি।”
আমি অধ্যাপকের পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলুম। তিনি শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন। আমি পরিচয় দিলুম, “আমার নাম শ্রীনবীনমাধব সেনগুপ্ত।”
বৃদ্ধের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বললেন, “বলেন কী। আপনিই ডাক্তার সেনগুপ্ত? কিন্তু আপনাকে যে বড়ো ছেলেমানুষ দেখাচ্ছে।”
আমি বললুম, “ছেলেমানুষ না তো কী। আমার বয়স এই ছত্রিশের বেশি নয়— সাঁইত্রিশে পড়ব।”
আবার অচিরার সেই কলমধুর কণ্ঠের হাসি। আমার মনে যেন দূন লয়ের ঝংকারে সেতার বাজিয়ে দিল। বললে, “দাদর কাছে সবাই ছেলেমানুষ। আর উনি নিজে সব ছেলেমানুষের আগরওয়াল।”
অধ্যাপক হেসে বললেন, “আগরওয়াল, ভাষায় নতুন শব্দের আমদানি!”
অচিরা বললে, “মনে নেই? সেই যে তোমার মাড়োয়াড়ি ছাত্র কুন্দনলাল আগরওয়ালা, আমাকে এনে দিত বোতলে করে কাঁচা আমের চাট্নি— তাকে জিগ্গেসা করেছিলুম আগরওয়াল শব্দের অর্থ কী, সে ফস্ করে বলে দিল পায়োনিয়র।”
অধ্যাপক বললেন, “ডাক্তার সেনগুপ্ত, আপনার সঙ্গে আলাপ হল যদি,