পড়বে ডাক্তার সেনগুপ্ত। সূর্যের কাছাকাছি এলে ধূমকেতুর কেতুটা পায় লোপ, মুণ্ডুটা থাকে বাকি।”
এইখানে শেষ হল আমার বড়োদিন। দেখলাম বার্ধক্যের কী সৌম্যসুন্দর মূর্তি। পালিশ-করা লাঠি হাতে, গলায় শুভ্র পাট-করা চাদর, ধুতি যত্নে কোঁচানো, গারে তসরের জামা, মাথায় শুভ্র চুল বিরল হয়ে এসেছে কিন্তু পরিপাটি করে আঁচড়ানো। স্পষ্ট বোঝা যায় নাতনির হাতের শিল্পকার্য এঁর বেশভূষণে, এঁর দিনযাত্রায়। অতিলালনের অত্যাচার ইনি সস্নেহে সহ্য করেন, খুশি রাখবার জন্যে নাতনিটিকে।
এই গল্পের পক্ষে অধ্যাপকের ব্যবহারিক নাম অনিলকুমার সরকার। তিনি গত জেনেরেশনের কেম্ব্রিজের-বড়োপদবী-ধারী। মাস আষ্টেক আগে কোনো কলেজের অধ্যক্ষপদ ত্যাগ করে এখানকার এস্টেটের একটা পোড়ো বাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজের খরচে সেটা বাসযোগ্য করেছেন।
অন্তপর্ব
আমার গল্পের আদিপর্ব হল শেষ। ছোটো গল্পের আদি ও অন্তের মাঝখানে বিশেষ একটা ছেদ থাকে না— ওর আকৃতিটা গোল।
অচিরার সঙ্গে আমার অপরিচয়ের ব্যবধান ক্ষয় হয়ে আসছে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যেন পরিচয়টাই ব্যবধান। কাছাকাছি আসছি বটে কিন্তু তাতে একটা প্রতিঘাত জাগছে। কেন। অচিরার প্রতি আমার ভালোবাসা ওর কাছে স্পষ্ট হয়ে আসছে, অপরাধ কি তারই মধ্যে। কিংবা আমার দিকে ওর সৌহৃদ্য স্ফুটতর হয়ে উঠছে, সেইটেতেই ওর গ্লানি? কে জানে।
সেদিন চড়িভাতি তনিকা নদীর তীরে।
অচিরা ডাক দিলে, “ডাক্তার সেনগুপ্ত!”
আমি বললুম, “সেই প্রাণীটার কোনো ঠিকানা নেই, সুতরাং কোনো জবাব মিলবে না।”
“আচ্ছা, তা হলে নবীনবাবু।”
“সেও ভালো, যাকে বলে মন্দর ভালো।”
“কাণ্ডটা কী দেখলেন তো?”
আমি বললুম, “আমার সামনে লক্ষ্য করবার বিষয় কেবল একটিমাত্রই ছিল, আর কিছুই ছিল না।”
এইটুকু ঠাট্টায় অচিরা সত্যই বিরক্ত হয়ে বললে, “আপনার আলাপ ক্রমেই যদি অমন ইশারাওয়ালা হয়ে উঠতে থাকে তা হলে ফিরিয়ে আনব ডাক্তার সেনগুপ্তকে, তাঁর স্বভাব ছিল গম্ভীর।”
আমি বললাম, “আচ্ছা, তা হলে কাণ্ডটা কী হয়েছিল বলুন।”
“ঠাকুর যে ভাত রেঁধেছিল সে কড়কড়ে, আদ্ধেক তার চাল। আমি বললুম, ‘দাদু, এ তো তোমার চলবে না।’ দাদু অমনি বলে বসলেন, ‘জান তো ভাই, খাবার জিনিস শক্ত হলে ভালো করে চিবোবার দরকার হয়, তাতেই হজমের সাহায্য করে।’