“তার মানে, ওরই সাহায্যে আপনার সঙ্গে প্রথম কথাটা হয়ে গেল। এতদিন কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলুম না কী যে বলি।”
“কিন্তু ও যে ডাকাত।”
“না, ও ডাকাত নয়, ও আমার বরকন্দাজ।”
অচিরা মুখে তার খয়েরি রঙের আঁচল তুলে ধরে খিল্খিল্ করে হেসে উঠল। কী মিষ্টি তার ধ্বনি, যেন ঝর্নার স্রোতে নুড়ির সুরওয়ালা শব্দ।
হাসি থামতেই বললে, “কিন্তু সত্যি হলে খুব মজা হত।”
“মজা হত কার পক্ষে।”
“যাকে নিয়ে ডাকাতি তার পক্ষে। এই রকম যে একটা গল্প পড়েছি।”
“তার পরে উদ্ধারকর্তার কী হত।”
“তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে চা খাইয়ে দিতুম।”
“আর এই ফাঁকি উদ্ধারকর্তার কী হবে।”
“তার তো আর-কিছুতে দরকার নেই। সে তো আলাপ করবার প্রথম কথাটা চেয়েছিল— পেয়েছে দ্বিতীর তৃতীর চতুর্থ পঞ্চম কথা।”
“গণিতের সংখ্যাগুলো হঠাৎ ফুরোবে না তো?”
“কেন ফুরোবে।”
“আচ্ছা, আপনি হলে আমাকে প্রথম কথা কী বলতেন।”
“আমি হলে বলতুম, রাস্তায় ঘাটে কতকগুলো নুড়ি কুড়িয়ে কুড়িয়ে কী ছেলেমানুষি করছেন। আপনার কি বয়স হয় নি।”
“কেন বলেন নি।”
“ভয় করেছিল।”
“ভয়? আমাকে ভয়!”
“আপনি যে বড়ো লোক। দাদুর কাছে শুনেছি। তিনি যে আপনার লেখা প্রবন্ধ বিলিতি কাগজে পড়েছিলেন। তিনি যা পড়েন আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন।”
“এটাও করেছিলেন?”
“হাঁ, করেছিলেন। কিন্তু লাটিন নামের পাহারার ঘটা দেখে জোড়হাত করে বলেছিলুম, দাদু, এটা থাক্, বরঞ্চ তোমার কোয়ণ্টম থিওরির বইখানা নিয়ে আসি।”
“সেটা বুঝি আপনি বুঝতে পারেন?”
“কিছুমাত্র না। কিন্তু দাদুর একটা বদ্ধ সংস্কার আছে— সবাই সবকিছুই বুঝতে পারে। তাঁর সে বিশ্বাস ভাঙতে আমার ভালো লাগে না। তাঁর আর-একটা আশ্চর্য ধারণা আছে—মেয়েদের সহজবুদ্ধি পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি তীক্ষ্ণ। তাই ভয়ে ভয়ে আছি এইবার নিশ্চয়ই ‘টাইম-স্পেস’এর জোড়-মেলানো সম্বন্ধের ব্যাখ্যা আমাকে শুনতে হবে। আসল কথা, মেয়েদের উপর তাঁর করুণার অন্ত নেই। দিদিমা যখন বেঁচে ছিলেন, বড়ো বড়ো কথা পাড়লেই তিনি মুখ বন্ধ করে দিতেন। তাই মেয়েদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি যে কতদূর যেতে পারে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিদিমার কাছ থেকে পান নি। আমি ওঁকে হতাশ করতে পারব না। অনেক শুনেছি, বুঝি নি, আরও অনেক শুনব আর বুঝব না।”
অচিরার দুই চোখ কৌতুকে স্নেহে জ্বল্জ্বল্ ছল্ছল্ করে উঠল। ইচ্ছে