শেয়ার থাকবে না, এটা অস্বাভাবিক। তাই সবাই সন্দেহ করে—”
সোহিনী চৌকি থেকে উঠে দাঁড়াল। বললে, “আসল সন্দেহের মূল আরও অনেক আগেকার দিনের। কে তোর বাপ্ কার সম্পত্তির শেয়ার চাস? এমন লোকের তুই মেয়ে এ কথা মুখে আনতে তোর লজ্জা করে না?”
নীলা লাফিয়ে উঠে বললে, “কী বলছ মা!”
“সত্যি কথা বলছি। তাঁর কাছে কিছুই গোপন ছিল না, তিনি জানতেন সব। আমার কাছে যা পাবার তা তিনি সম্পূর্ণ পেয়েছেন, আজও পাবেন তা, আর-কিছু তিনি গ্রাহ্য করেন নি।”
ব্যারিস্টর ঘোষ বললে, “আপনার মুখের কথা তো প্রমাণ নয়।”
“সে কথা তিনি জানতেন। সকল কথা খোলসা করে তিনি দলিল রেজেস্টি করে গেছেন।”
“ওহে বঙ্কু, রাত হল যে, আর কেন। চলো।”
পেশোয়ারীর ভঙ্গি দেখে পঁয়ষটি জন অন্তর্ধান করলে।
এমন সময় সুটকেস হাতে এসে উপস্থিত চৌধুরী। বললেন, “তোমার টেলিগ্রাম পেয়ে ছুটে আসতে হল।—কী রে রেবি, রেবি, মুখখানা যে পার্চ্মেণ্টের মতো সাদা হয়ে গেছে।—ওরে, খোকার দুধের বাটি গেল কোথায়।”
নীলাকে দেখিয়ে সোহিনী বললে, “যিনি জোগাবেন তিনি যে ঐ বসে আছেন।”
“গয়লানীর ব্যবসা ধরেছ নাকি মা।”
“গয়লা ধরার ব্যবসা ধরেছে, ঐ যে বসে আছে শিকারটি।”
“কে, আমাদের রেবি নাকি।”
“এইবার আমার মেয়ে আমার ল্যাবরেটরিকে বাঁচিয়েছে। আমি লোক চিনতে পারি নি, কিন্তু আমার মেয়ে ঠিক বুঝেছিল যে ল্যাবরেটরিতে গোয়ালঘর বসিয়ে দিয়েছিলুম— গোবরের কুণ্ডে আর-একটু হলেই ডুবত সমস্ত জিনিসটা।”
অধ্যাপক বললেন, “মা, তুমি এই জীবটিকে আবিষ্কার করেছ যখন, তখন এই গোষ্ঠবিহারীর ভার তোমাকেই নিতে হবে। ওর আর সবই আছে কেবল বুদ্ধি নেই, তুমি কাছে থাকলে তার অভাবটা টের পাওয়া যাবে না। বোকা পুরুষদের নাকে দড়ি দিয়ে চালিয়ে নিয়ে বেড়ানো সহজ।”
নীলা বললে, “কী গো সার আইজাক নিউটন, রেজেস্ট্রি আপিসে নোটিস তো দেওয়া হয়েছে, ফিরিয়ে নিতে চাও নাকি।”
বুক ফুলিয়ে রেবতী বললে, “ম’রে গেলেও না।”
“বিয়েটা হবে তা হলে অশুভ লগ্নে।”
“হবেই, নিশ্চয় হবে।”
সোহিনী বললে, “কিন্তু ল্যাবরেটরি থেকে শত হস্ত দূরে।”
অধ্যাপক বললেন, “মা নীলু, ও বোকা, কিন্তু অক্ষম নয়। ওর নেশাটা কেটে যাক, তার পরে ওর খোরাকের জন্যে বেশি ভাবতে হবে না।”
“সার আইজাক, তা হলে কিন্তু তোমার কাপড়চোপড়গুলো একটু ভদ্র রকমের বানাতে হবে, নইলে তোমার সামনে আমাকে আবার ঘোমটা ধরতে হবে।”