কথাটা চাপা পড়ল চোখের উপর আঁচল চাপার সঙ্গে।
“সদু, আমি দেখেছি যে এই একটা বিষয়ে তোমার ঠাট্টাটকুও সয় না।”
“তা সত্যি, পুলিসের ঠাট্টাতেও যে গায়ে দাঁত বসে। এখন কিছু খেয়ে নেবে কি না বলো।”
“তা নেব, সময় আছে, সব একেবারে পাকাপাকি ঠিকঠাক হয়ে গেছে।”
“দেখো, আমি সত্যি কথাই বলব। তোমরা যা কানাকানি কর তা যদি জানতে পারতুম তা হলে ওদের কাছে ফাঁস করে দেওয়া কর্তব্য মনে করতুম।”
“সর্বনাশ, কিছু, শুনেছ নাকি তুমি।”
“তোমাদের সংসারে চোখ কান খুলে রাখতেই হয়, কিছু কানে যায় বৈকি।”
“কানে যায়, আর তার পরে?”
“আর তার পরে চণ্ডীদাস বলেছেন ‘কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিয়া দিল প্রাণ’।”
“তোমার ঐ ঠাট্টাতেই তুমি জিতে যাও, কোন্টা যে তোমার আসল কথা ধরা যায় না।”
“তা বুঝবার বুদ্ধিই যদি থাকত তবে এই পলিস ইন্স্পেক্টরি কাজ তুমি করতে না। এর চেয়ে বড়ো কাজেই সরকার বাহাদুর তোমাকে লাগিয়ে দিতেন বিশ্বহিতৈষীর পদে, বক্তৃতা দিতে দিতে দেশে বিদেশে জাল ফেলতে।”
“সর্বনাশ, তা হলে সেই-যে মেয়েটির গুজব শোনা যাচ্ছে, সে দেখি আমার আপন ঘরেরই ভিতরকার।”
“ঐ দেখো, কুকুরটা চেঁচিয়ে মরছে। তাকে খাইয়ে ঠাণ্ডা করে আসি।”
ইন্স্পেক্টারবাবু মহা খাপ্পা হয়ে বললেন, “আমি এক্ষুনি গিয়ে লাগাব ঐ কুকুরটাকে আমার পিস্তলের গুলি।”
সদু তার স্বামীর কাপড় ধরে টেনে বললে, “না, কক্ষনো তুমি যেতে পারবে না।”
“কেন।”
“তুমি সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই একেবারে টুঁটি ক্যাঁক্ করে চেপে ধরবে। ও বড়ো বদমাইস কুকুর। ও কেবল আমাকেই চেনে।”
“একটা খবর পেয়েছি সদু সেই অনিল লোকটা হরবোলা, ও সব জন্তুরই নকল করতে পারে। রোজ রাত্রি দুটোর সময়ে ওই-যে তোমার ডাক দিচ্ছে না তাই বা বলি কী করে।”
সদু একেবারে জ্বলে উঠে বললে, “অ্যাঁ, শেষকালে আমাকে সন্দেহ! এই রইল তোমার ঘরকন্না পড়ে, আমি চললুম আমার ভগ্নীপতির বাড়িতে।”
এই বলে সে উঠে পড়ল।
“আরে কোথায় যাও। ভালো মুশকিল! নিজের ঘরের স্ত্রীকে ঠাট্টা করব না, আমি ঠাট্টার জন্যে পরের ঘরের মেরে কোথার খুঁজে পাই। পেলেই বা শান্তি রক্ষা হবে কী করে।”
ব’লে ওকে জোর করে ধরে বসালেন।
সদু কেবলই চোখ মুছতে লাগল।