পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নামঞ্জুর গল্প
৭৬৩

 আমি হেসে বললেম, “পুজোর বাজারে চলবে না কি।”

 “একেবারেই না। এটা তো অত্যন্তই হাল্কা-রকমের জিনিস।”

 সম্পাদকের দোষ নেই। জেলবাসের পর থেকে আমার অশ্রুজল অন্তঃশীলা বইছে। লোকে বাইরে থেকে আমাকে খুব হাল্কা প্রকৃতির লোক মনে করে।

 গল্পটা আমাকে ফেরত দিয়ে গেল।

 ঠিক সেই মুহূর্তে এল অনিল। বললে, “মুখে বলতে পারব না, এই চিঠিটা পড়ুন।”

 চিঠিতে অমিয়াকে, তার দেবীকে, যুগলক্ষ্মীকে বিবাহ করবার ইচ্ছে জানিয়েছে; এ কথাও বলেছে, অমিয়ার অসম্মতি নেই।

 তখন অমিয়ার জন্মবৃত্তান্ত তাকে বলতে হল। সহজে বলতেম না; কিন্তু জানতেম, হীনবর্ণের ’পরে অনিল শ্রদ্ধাপূর্ণ করুণা প্রকাশ করে থাকে। আমি তাকে বললেম, “পূর্বপুরুষের কলঙ্ক জন্মের দ্বারাই স্থলিত হয়ে যায়, এ তো তোমরা অমিয়ার জীবনেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছ। সে পদ্ম, তাতে পঙ্কের চিহ্ন নেই।”

 নববঙ্গের ভাইফোঁটার সভা তার পরে আর জমল না। ফোঁটা রয়েছে তৈরি, কপাল মেরেছে দৌড়। আর শুনেছি, অনিল কলকাতা ছেড়ে কুমিল্লায় স্বরাজ-প্রচারের কী-একটা কাজ নিয়েছে।

 অমিয়া কলেজে ভর্তি হবার উদ্যোগে আছে। ইতিমধ্যে পিসিমা তীর্থ থেকে ফিরে আসার পর শুশ্রূষার সাত-পাক বেড়ি থেকে আমার পা দুটো খালাস পেয়েছে।

 অগ্রহায়ণ ১৩৩২