সতীশ। মিস্টার ভাদুড়ি, আমি বিদায় নিতে এসেছি।
ভাদুড়ি। আচ্ছা, তবে আজ—
সতীশ। যাবার আগে একটা কথা আছে।
ভাদুড়ি। কিন্তু সময় তো নেই, আমি এখন বেড়াতে বের হব।
সতীশ। কিছুক্ষণের জন্য কি সঙ্গে যেতে পারি।
ভাদুড়ি। তুমি যে পার তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু আমি পারব না। সম্প্রতি আমি সঙ্গীর অভাবে তত অধিক ব্যাকুল হয়ে পড়ি নি।
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
শশধর। আঃ, কী বল। তুমি কি পাগল হয়েছ নাকি।
সুকুমারী। আমি পাগল না তুমি চোখে দেখতে পাও না!
শশধর। কোনোটাই আশ্চর্য নয়, দুটোই সম্ভব। কিন্তু—
সুকুমারী। আমাদের হরেনের জন্ম হতেই দেখ নি ওদের মুখে কেমন হয়ে গেছে? সতীশের ভাবখানা দেখে বুঝতে পার না?
শশধর। আমার অত ভাব বুঝবার ক্ষমতা নেই, সে তো তুমি জানই। মন জিনিসটাকে অদৃশ্য পদার্থ বলেই শিশুকাল হতে আমার কেমন একটা সংস্কার বদ্ধমূল হয়ে গেছে। ঘটনা দেখলে তবু কতকটা বুঝতে পারি।
সকুমারী। সতীশ যখনই আড়ালে পায় তোমার ছেলেকে মারে, আবার বিধুও তার পিছনে পিছনে এসে খোকাকে জুজুর ভয় দেখায়।
শশধর। ঐ দেখো, তোমরা ছোটো কথাকে বড়ো করে তোল। যদিই বা সতীশ খোকাকে কখনো—
সুকুমারী। সে তুমি সহ্য করতে পার, আমি পারব না—ছেলেকে তো তোমার গর্ভে ধরতে হয় নি।
শশধর। সে কথা আমি অস্বীকার করতে পারব না। এখন তোমার অভিপ্রায় কী শুনি।
সুকুমারী। শিক্ষা সম্বন্ধে তুমি তো বড়ো বড়ো কথা বল, একবার তুমি ভেবে দেখো-না আমরা হরেনকে যে ভাবে শিক্ষা দিতে চাই তার মাসি তাকে অন্যরূপ শেখায়—সতীশের দৃষ্টান্তটিই বা তার পক্ষে কিরূপ সেটাও তো ভেবে দেখতে হয়।
শশধর। তুমি যখন অত বেশি করে ভাবছ তখন তার উপরে আমার আর ভাববার দরকার কী আছে। এখন কর্তব্য কী বলো।
সুকুমারী। আমি বলি, সতীশকে তুমি বলো, তার মার কাছে থেকে সে এখন কাজকর্মের চেষ্টা দেখুক। পুরুষমানুষ পরের পয়সায় বাবুগিরি করে, সে কি ভালো দেখতে হয়।
শশধর। ওর মা যে টাকা পায় তাতে সতীশের চলবে কী করে।
সুকুমারী। কেন, ওদের বাড়িভাড়া লাগে না, মাসে পঁচাত্তর টাকা কম কী।
শশধর। সতীশের যেরূপ চাল দাঁড়িয়েছে, পঁচাত্তর টাকা তো সে চুরুটের ডগাতেই ফুঁকে দেবে। মার গহনাগাঁটি ছিল, সে তো অনেকদিন হল গেছে; এখন হবিষ্যান্ন