পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৪৮
গল্পগুচ্ছ

দাঁড়াইলেন। মাসেফ নবগোপালবাব তাঁহার সাক্ষাই প্রামাণ্য করিয়া মকদ্দমা ডিসমিস করিয়া দিলেন। ভট্টাচাষের খাস প্রজারা ইহা লইয়া গ্রামে ভারি উৎসব সমারোহ আরম্ভ করিয়া দিল। হরিহর তাড়াতাড়ি তাহাদিগকে থামাইয়া দিলেন। নায়েব আসিয়া পরম আড়ম্বরে ভট্টাচায্যের পদধলি লইয়া গায়ে মাথায় মাখিল এবং আপিল রজন্ম করিল। উকিলরা হরিহরের নিকট হইতে টাকা লন না। তাঁহারা ব্রহমণকে বারবার আশবাস দিলেন, এ মকদ্দমায় হারিবার কোনো সম্ভাবনাই নাই। দিন কি কখনও রাত হইতে পারে। শনিয়া হরিহর নিশ্চিত হইয়া ঘরে বসিয়া রহিলেন।

 একদিন জমিদারি কাছারিতে ঢাকঢোল বাজিয়া উঠিল, পঠিা কাটিয়া নায়েবের বাসায় কালীপজা হইবে। ব্যাপারখানা কী। ভট্টাচার্য খবর পাইলেন, আপিলে তাঁহার হার হইয়াছে।

 ভট্টাচার্য মাথা চাপড়াইয়া উকিলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বসন্তবাব, করিলেন কী। আমার কী দশা হইবে।”

 দিন যে কেমন করিয়া রাত হইল বসন্তবাব তাহার নিগুঢ় বক্তাত বলিলেন, “সম্প্রতি যিনি নতেন অ্যাডিশনাল জজ হইয়া আসিয়াছেন তিনি মন্সেফ থাকা কালে মাসেফ নবগোপালবাবরে সহিত তাঁহার ভারি খিটিমিটি বাধিয়াছিল। তখন কিছ করিয়া উঠিতে পারেন নাই; আজ জজের আসনে বসিয়া নবগোপালবাবরে রায় পাইবামাত্র উলটাইয়া দিতেছেন; আপনি হারিলেন সেইজন্য।” ব্যাকুল হরিহর কহিলেন, “হাইকোটে ইহার কোনো আপিল নাই?” বসন্ত কহিলেন, “জজবাব আপিলে ফল পাইবার সম্ভাবনামাত্র রাখেন নাই। তিনি আপনাদের সাক্ষীকে সন্দেহ করিয়া বিরদ্ধে পক্ষের সাক্ষীকেই বিশ্বাস করিয়া গিয়াছেন; হাইকোটে তো সাক্ষীর বিচার হইবে না।”

 বন্ধ সাশ্রনেত্রে কহিলেন, “তবে আমার উপায়?”

 উকিল কহিলেন, “উপায় কিছুই দেখি না।”

 গিরিশ বসু পরদিন লোকজন সঙ্গে লইয়া ঘটা করিয়া ব্রাহরণের পদধলি লইয়া গেল এবং বিদায়কালে উচ্ছসিত দীর্ঘনিশবাসে কহিল, “প্রভু, তোমারই ইচ্ছা।”