পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৯০
গল্পগুচ্ছ

 সাহেব ঈষৎ হাসিয়া অগত্যা এই গলায়-মাদুলি-পরা কৃশকায় শ্যামবর্ণ গম্ভীর প্রশান্ত মৃদুস্বভাব বাঙালির ছেলেটিকে সঙ্গে লইতে রাজি হইলেন।

 তখন শশী বিদায় লইবার সময় বালক তাহার আঁচল চাপিয়া ধরিল। সাহেব কহিলেন, “বাবা, তোমার কোনো ভয় নেই—এসো।”

 ঘোমটার মধ্য হইতে অবিরল অশ্রু মোচন করিতে করিতে শশী কহিল, “লক্ষী ভাই, যা ভাই-আবার তোর দিদির সঙ্গে দেখা হবে।”

 এই বলিয়া তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া, তাহার মাথায় পিঠে হাত বুলাইয়া, কোনোমতে আপন অঞ্চল ছাড়াইয়া তাড়াতাড়ি সে চলিয়া গেল; অমনি সাহেব নীলমণিকে বাম হস্তের দ্বারা বেষ্টন করিয়া ধরিলেন, সে “দিদি গো দিদি” করিয়া উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিতে লাগিল-শশী একবার ফিরিয়া চাহিয়া দূর হইতে প্রসারিত দক্ষিণহস্তে তাহার প্রতি নীরবে সান্ত্বনা প্রেরণ করিয়া বিদীর্ণহৃদয়ে চলিয়া গেল।

 আবার সেই বহুকালের চিরপরিচিত পুরাতন ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মিলন হইল। প্রজাপতির নির্বন্ধ!

 কিন্তু, এ মিলন অধিক দিন স্থায়ী হইল না। কারণ, ইহার অনতিকাল পরেই একদিন প্রাতঃকালে গ্রামবাসীগণ সংবাদ পাইল যে, রাত্রে শশী ওলাউঠা রোগে আক্রান্ত হইয়া মরিয়াছে এবং রাত্রেই তাহার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হইয়া গেছে।

 কেহ এ সম্বন্ধে কোনো কথা বলিল না। কেবল সেই প্রতিবেশিনী তারা মাকে মাঝে গর্জন করিয়া উঠিতে চাহিত, সকলে “চুপ চুপ করিয়া তাহার মুখ বন্ধ করিয়া দিত।

 বিদায়কালে শশী ভাইকে কথা দিয়া গিয়াছিল, আবার দেখা হইবে। সে কথা কোনখানে রক্ষা হইয়াছে জানি না।

 চৈত্র ১৩০১