পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/১৭১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
স্বর্ণমৃগ
১৬৭

 বৈদ্যনাথ খানিকক্ষণ কিছু বলিলেন না, তার পর মৃদু স্বরে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন আছ।”

 স্ত্রী তাহার কোনো উত্তর না দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী হইল।”

 বৈদ্যনাথ নিরুত্তরে কপালে আঘাত করিলেন। মোক্ষদার মুখ ভারি শক্ত হইয়া উঠিল।

 ছেলেরা প্রকাণ্ড একটা অকল্যাণের ছায়া দেখিয়া আস্তে আস্তে উঠিয়া গেল। ঝির কাছে গিয়া বলিল, “সেই নাপিতের গল্প বল।” বলিয়া বিছানায় শুইয়া পড়িল।

 রাত হইতে লাগিল, কিন্তু দুজনের মুখে একটি কথা নাই। বাড়ির মধ্যে কী-একটা যেন ছম্‌ছম্‌ করিতে লাগিল এবং মোক্ষদার ঠোঁটদুটি ক্রমশই বজ্রের মতো আঁটিয়া আসিল।

 অনেকক্ষণ পরে মোক্ষদা কোনো কথা না বলিয়া ধীরে ধীরে শয়নগৃহের মধ্যে প্রবেশ করিলেন এবং ভিতর হইতে দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিলেন।

 বৈদ্যনাথ চুপ করিয়া বাহিরে দাঁড়াইয়া রহিলেন। চৌকিদার প্রহর হাঁকিয়া গেল। শ্রান্ত পৃথিবী অকাতর নিদ্রায় মগ্ন হইয়া রহিল। আপনার আত্মীয় হইতে আরম্ভ করিয়া অনন্ত আকাশের নক্ষত্র পর্যন্ত কেহই এই লাঞ্ছিত ভগ্ননিদ্র বৈদ্যনাথকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করিল না।

 অনেক রাত্রে, বোধ করি কোনো স্বপ্ন হইতে জাগিয়া বৈদ্যনাথের বড়ো ছেলেটি শয্যা ছাড়িয়া আস্তে আস্তে বারান্দায় আসিয়া ডাকিল, “বাবা।” তখন তাহার বাবা সেখানে নাই। অপেক্ষাকৃত উর্ধ্বকণ্ঠে রুদ্ধ দ্বারের বাহির হইতে ডাকিল, “বাবা।” কিন্তু কোনো উত্তর পাইল না।

 আবার ভয়ে ভয়ে বিছানায় গিয়া শয়ন করিল।

 পূর্বপ্রথানুসারে ঝি সকালবেলায় তামাক সাজিয়া তাহাকে খুঁজিল, কোথাও দেখিতে পাইল না। বেলা হইলে প্রতিবেশিগণ গৃহপ্রত্যাগত বান্ধবের খোঁজ লইতে আসিল, কিন্তু বৈদ্যনাথের সহিত সাক্ষাৎ হইল না।


 ভাদ্র-আশ্বিন ১২৯৯