পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩০২
গল্পগুচ্ছ

ইহাতে হস্তক্ষেপ করিতে গেলে তাহারা বলিবে, তবে তোমার বিষয় তুমি ফিরিয়া লও, আমরা ইহা রাখিতে পারিব না। কাজ কী বাপু, এ কয়টা দিন কোনোমতে হরিনাম করিয়া কাটাইয়া দিতে পারিলে বাঁচি।


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

 এই ভাবে কাজ চলিতে লাগিল। অনেক মকদ্দমা-মামলা হাঙ্গামাফেসাদ করিয়া বিপিনবিহারী সমস্তই প্রায় এক-প্রকার মনের মতো গুছাইয়া লইলেন।

 অনেক প্রজাই ভয়ক্রমে বশ্যতা স্বীকার করিল, কেবল মির্জাবিবির পুত্র অছিমদ্দি বিশ্বাস কিছুতেই বাগ মানিল না।

 বিপিনবিহারীর আক্রোশও তাহার উপরে সব চেয়ে বেশি। ব্রাহ্মণের ব্রহ্মত্রর একটা অর্থ বোঝা যায়, কিন্তু এই মুসলমান-সন্তান যে কী হিসাবে এতটা জমি নিস্কর ও স্বল্প করে উপভোগ করে বুঝা যায় না। একটা সামান্য যবন বিধবার ছেলে গ্রামের ছাত্রবৃত্তি স্কুলে দুই ছত্র লিখিতে পড়িতে শিখিয়াছে, কিন্তু আপনার সৌভাগ্যগর্বে সে যেন কাহাকেও গ্রাহ্য করে না।

 বিপিন পুরাতন কর্মচারীদের কাছে জানিতে পারিলেন, কর্তার আমল হইতে বাস্তবিক ইহার। বহুকাল অনুগ্রহ পাইয়া আসিতেছে। কিন্তু, এ অনুগ্রহের কোনো বিশেষ কারণ তাহার নির্ণয় করিতে পারে না। বোধ করি, অনাথা বিধবা নিজ দুঃখ জানাইয়া কর্তার দয়া উদ্রেক করিয়াছিল।

 কিন্তু, বিপিনের নিকট এই অনুগ্রহ সর্বাপেক্ষা অযোগ্য বলিয়া প্রতিভাত হইল। বিশেষত ইহাদের পূর্বেকার দরিদ্র অবস্থা বিপিন দেখেন নাই, এখন ইহাদের সচ্ছলতার বাড়াবাড়ি এবং অপর্যাপ্ত দম্ভ দেখিয়া বিপিনের মনে হইত, ইহারা যেন তাঁহার দয়াদুর্বল সরল পিতাকে ঠকাইয়া তাঁহাদের বিষয়ের এক অংশ চুরি করিয়া লইয়াছে।

 অছিমদ্দিও উদ্ধত প্রকৃতির যুবক। সে বলিল, প্রাণ যাইবে তবু আমার অধিকারের এক তিল ছাড়িয়া দিব না। উভয় পক্ষে ভারি যুদ্ধ বাধিয়া উঠিল।

 অছিমদ্দির বিধবা মা ছেলেকে বার বার করিয়া বুঝাইল, জমিদারের