পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা আষাঢ়ে গল্প మ& টেক্কা ভাবিতেছে, "সাহেব ছোকরাটাকে দেখিতে নেহাত মন্দ না হউক কিন্তু উহার শ্রী নাই— আমার চাল-চলনের মধ্যে এমন একটা মাহাত্ম্য আছে যে, কোনো কোনো ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টি আমার দিকে আকৃষ্ট না হইয়া থাকিতে পারে না।’ সাহেব ভাবিতেছে, টেক্কা সবাদা ভারি টকটক করিয়া ঘাড় বাঁকাইয়া বেড়াইতেছে; মনে করিতেছে, উহাকে দেখিয়া বিবিগলা বক ফাটিয়া মারা গেল।’ বলিয়া ঈষৎ বক্স হাসিয়া দপণে মুখ দেখিতেছে। দেশে যতগুলি বিবি ছিলেন সকলেই প্রাণপণে সাজসজা করেন আর পরপরকে লক্ষ্য করিয়া বলেন, "আ মরিয়া যাই। গবির্ণীর এত সাজের ধর্ম কিসের জন্য গো, বাপ । উহার রকম-সকম দেখিয়া লক্ষজা করে : বলিয়া বিগণ প্রযত্নে হাবভাব বিস্তার করিতে থাকেন। আবার কোথাও দুই সখায়, কোথাও দুই সখীতে গলা ধরিয়া নিভৃতে বসিয়া গোপন কথাবাতা হইতে থাকে। কখনো হাসে, কখনো কাঁদে, কখনো রাগ করে, কখনো মান-অভিমান চলে, কখনো সাধাসাধি হয় । যবেকগলো পথের ধারে বনের ছায়ায় তরমেলে পঠ রাখিয়া, শাকপত্ররাশির উপর পা ছড়াইয়া, অলসভাবে বসিয়া থাকে। বালা সনীল বসন পরিয়া সেই ছায়াপথ দিয়া আপন-মনে চলিতে চলিতে সেইখানে আসিয়া মুখ নত করিয়া চোখ ফিরাইয়া লয়— যেন কাহাকেও দেখিতে পায় নাই, যেন কাহাকেও দেখা দিতে আসে নাই, এমনি ভাব করিয়া চলিয়া যায়। তাই দেখিয়া কোনো কোনো খ্যাপা যবেক দুঃসাহসে ভব করিয়া তাড়াতাড়ি কাছে অগ্রসর হয়, কিন্তু মনের মতো একটাও কথা জোগায় না, অপ্রতিভ হইয়া দড়িাইয়া পড়ে, অনকেল অবসর চলিযা যায় এবং রমণীও অতীত মহেতের মতো ক্লমে ক্ৰমে দরে বিলীন হইয়া যায়। মাথার উপরে পাখি ডাকিতে থাকে, বাতাস অঞ্চল ও অলক উড়াইয়া হত হয় করিয়া বহিয়া যায়, তর-পল্লব ঝরঝর মরমর করে এবং সমুদ্রের অবিশ্রাম উচ্ছসিত ধৰনি হৃদয়ের অব্যন্ত বাসনাকে বিগণ দোদুল্যমান করিয়া তোলে। একটা বসন্তে তিনটে বিদেশী যবেক আসিয়া মরা গাঙে এমনি একটা ভরা তুফান তুলিয়া দিল। b রাজপত্র দেখিলেন, জোয়ার-ভাঁটার মাঝখানে সমস্ত দেশটা থমথম করিতেছে— কথা নাই, কেবল মুখ চাওয়াচাওয়ি ; কেবল এক পা এগোনো, দই পা পিছনো ; কেবল আপনার মনের বাসনা সতপোকার করিয়া বালির ঘর গড়া এবং বালির ঘর ভাঙা। সকলেই যেন ঘরের কোণে বসিয়া আপনার অগ্নিতে আপনাকে আহুতি দিতেছে, এবং প্রতিদিন কৃশ ও বাক্যহীন হইয়া যাইতেছে ; কেবল চোখ-দটা জলিতেছে, এবং অন্তনিহিত বাণীর আন্দোলনে ওঠাধর বায়কেল্পিত পল্লবের মতো পন্দিত হইতেছে । রাজপত্র সকলকে ডাকিয়া বলিলেন, “বাঁশি আনো, তরণভেরী বাজাও, সকলে