পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৬ গল্পগুচ্ছ আনন্দধবনি করো, হরতনের বিবি বয়-বরা হইবেন।” তৎক্ষণাৎ দহলা নহলা বাঁশিতে ফ দিতে লাগিল, দরি তিরি তরীভেরী লইয়া পড়িল। হঠাৎ এই তুমুল আনন্দতরঙ্গে সেই কানাকানি, চাওয়াচাওয়ি ভাঙিয়া গেল । উৎসবে নরনারী একত্র মিলিত হইয়া কত কথা, কত হাসি, কত পরিহাস। কত রহস্যচ্ছলে মনের কথা বলা, কত ছল করিয়া অবিশ্বাস দেখানো, কত উচ্চহাস্যে তুচ্ছ আলাপ | ঘন অরণ্যে বাতাস উঠিলে যেমন শাখায় শাখায়, পাতায় পাতায়, লতায় বক্ষে, নানা ভঙ্গিতে হেলাদোলা মেলামেলি হইতে থাকে, ইহাদের মধ্যে তেমনি হইতে লাগিল । এমনি কলরব আনন্দোৎসবের মধ্যে বাঁশিতে সকাল হইতে বড়ো মধরে স্বরে সাহানা বাজিতে লাগিল। আনন্দের মধ্যে গভীরতা, মিলনের মধ্যে ব্যাকুলতা, বিশ্বদশ্যের মধ্যে সৌন্দর্য, হৃদয়ে হৃদয়ে প্রীতির বেদনা সঞ্চার করিল। যাহারা ভালো আনন্দে উদাস হইয়া গেল । হরতনের বিবি রাঙা বসন পরিয়া সমস্ত দিন একটা গোপন ছায়াকুঞ্জে বসিয়া ছিল। তাহার কানেও দর হইতে সাহানার তান প্রবেশ করিতেছিল এবং তাহার দটি চক্ষ মুদ্রিত হইয়া আসিয়াছিল; হঠাৎ এক সময়ে চক্ষু মেলিয়া দেখিল, সম্মুখে রাজপত্র বসিয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া আছে; সে অমনি কম্পিতদেহে দই হাতে মুখ ঢাকিয়া ভূমিতে লুণ্ঠিত হইয়া পড়িল । রাজপত্র সমস্ত দিন একাকী সমুদ্রতীরে পদচারণা করিতে করিতে সেই সম্প্রস্ত নেত্রক্ষেপ এবং সলজ লন্ঠন মনে মনে আলোচনা করিতে লাগিলেন। જે রাত্রে শতসহস্র দীপের আলোকে, মালার সুগন্ধে, বাঁশির সংগীতে, অলংকৃত সমসজিত সহাস্য শ্রেণীবদ্ধ যুবকদের সভায় একটি বালিকা ধীরে ধীরে কম্পিতচরণে মালা হাতে করিয়া রাজপত্রের সম্মুখে আসিয়া নতশিরে দাঁড়াইল। অভিলষিত কণ্ঠে মালাও উঠিল না, অভিলষিত মুখে চোখও তুলিতে পারিল না। কাজপত্র তখন আপনি শির নত করিলেন এবং মালা পখলিত হইযা তাঁহার কণ্ঠে পড়িযা গেল। চিত্ৰবৎ নিস্তব্ধ সভা সহসা আনন্দোচ্ছাসে আলোড়িত হইয়া উঠিল। সকলে বরকন্যাকে সমাদর করিয়া সিংহাসনে লইয়া বসাইল। রাজপত্রকে সকলে মিলিয়া রাজ্যে অভিষেক করিল। SO সমদ্রপারের দঃখিনী দয়ারানী সোনার তরীতে চড়িয়া পত্রের নবরাজ্যে আগমন করিলেন । W ছবির দল হঠাৎ মানুষ হইয়া উঠিয়াছে। এখন আর পবের মতো সেই অবিচ্ছিন্ন