পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>>O গল্পগুচ্ছ বিদ্যুতের মতো বৈদ্যনাথ ভাবী ঐশ্বয্যের উজ্জল মতি দেখিতে পাইলেন। সন্ন্যাসীকে প্রচুর পরিমাণে আদর-অভ্যর্থনা ও আহায জোগাইলেন। অনেক সাধাসাধনার পর জানিতে পারিলেন, সন্ন্যাসী সোনা তৈরি করিতে পারে এবং সে বিদ্যা তাঁহাকে দান করিতেও সে অসমত হইল না। গহিণীও নাচিয়া উঠিলেন। যকৃতের বিকার উপস্থিত হইলে লোকে যেমন সমস্ত হলদেবণ দেখে, তিনি সেইরপ পথিবীময় সোনা দেখিতে লাগিলেন। কল্পনাকারিকরের বারা শয়নের খাট, গহসজা এবং গহপ্রাচীর পর্যন্ত সোনায় মণ্ডিত করিয়া মনে-মনে বিন্ধ্যবাসিনীকে নিমন্ত্ৰণ করিলেন। সন্ন্যাসী প্রতিদিন দুই সের করিয়া দগধ এবং দেড় সের করিয়া মোহনভোগ খাইতে লাগিল এবং বৈদ্যনাথের কোম্পানির কাগজ দোহন করিয়া অজস্র রৌপারস নিঃসত করিয়া লইল । ছিপ ছড়ি লাটাইয়ের কাঙালরা বৈদ্যুনাথের রন্ধ বারে নিম্ফল আঘাত করিয়া চলিয়া যায়। ঘরের ছেলেগুলো যথাসময়ে খাইতে পায় না, পড়িয়া গিয়া কপাল ফলায়, কাঁদিয়া আকাশ ফাটাইয়া দেয়, কতা গহিণী কাহারও ভ্ৰক্ষেপ নাই। নিস্তৰধভাবে অগ্নিকুণ্ডের সম্মুখে বসিয়া কটাহের দিকে চাহিয়া উভয়েব চোখে পল্লব নাই, মুখে কথা নাই। তৃষিত একাগ্র নেত্রে অবিশ্রাম অগ্নিশিখার প্রতিবিম্বব পড়িয়া চোখের মণি যেন পশমণির গণ প্রাপ্ত হইল। দষ্টিপথ সায়াহ্নের সন্যাস্তপথের মতো জলন্ত সবেণ প্রলেপে রাঙা হইয়া উঠিল। দখানা কোম্পানির কাগজ এই সবণ-অগ্নিতে আহুতি দেওয়ার পর একদিন সন্ন্যাসী আশবাস দিল, “কাল সোনার রঙ ধরিবে ।” সেদিন রাত্রে আর কাহারও ঘন্ম হইল না; সন্তীপুরুষে মিলিয়া সরণপুরী নিমণি করিতে লাগিলেন। তৎসম্বন্ধে মাঝে মাঝে উভয়ের মধ্যে মতভেদ এবং তক ও উপস্থিত হইয়াছিল, কিন্তু আনন্দ-আবেগে তাহার মীমাংসা হইতে বিলম্বব হয় নাই। পরপর পরস্পরের খাতিরে নিজ নিজ মত কিছু কিছু পবিত্যাগ করতে অধিক ইতস্তত করেন নাই, সে রাত্রে দাম্পত্য একীকরণ এত ঘনীভূত হইয়া উঠিয়ছিল। পরদিন আর সন্ন্যাসীর দেখা নাই। চারি দিক হইতে সোন, পঙ ঘুচিয়া গিয়া সযকিরণ পর্যন্ত অন্ধকার হইয়া দেখা দিল । ইহার পর হইতে শয়নের খাট, গতসক্তা এবং গহপ্রাচীর চতুগণ দারিদ্র্য এবং জীর্ণতা প্রকাশ করিতে লাগিল । এখন হইতে গহকাযে বৈদ্যনাথ কোনো-একটা সামান্য মত প্রকাশ করিতে গেলে গহিণী তীব্রমধর স্বরে বলেন, “বন্ধির পরিচয় অনেক দিয়াছ, এখন কিছুদিন ক্ষান্ত থাকো।” বৈদ্যনাথ একেবারে নিবিয়া যায়। মোক্ষদা এমনি একটা শ্রেষ্ঠতার ভাব ধারণ করিয়াছে, যেন এই লণমরীচিকায় সে নিজে এক মহোতের জন্যও আশবসত হয় নাই । অপরাধী বৈদ্যনাথ সত্রীকে কিঞ্চিৎ সন্তুষ্ট করিবার জন্য বিবিধ উপায় চিন্তা করিতে লাগিলেন। একদিন একটি চতুকোণ মোড়কে গোপন উপহার লইয়া সীর নিকট গিয়া প্রচুর হাস্যবিকাশপবেক সাতিশয় চতুরতাব সহিত ঘাড় নাড়িয়া কহিলেন, “কণী আনিয়াছি বলো দেখি।” সী কৌতুহল গোপন করিয়া উদাসীনভাবে কহিলেন, “কেমন করিয়া বলিব,